বাংলাদেশের সুন্দরবন ‘ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ বা বিশ্ব এতিহ্যের মার্যাদা হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে। তবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে মর্যাদার তালিকায় রাখতে সরকার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটিকে কোনোক্রমেই যাতে বিশ্ব এতিহ্যের মর্যাদা থেকে বাদ দেয়া না হয় সে জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে জাতিসংঘের ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের কাউন্সিলের সভায়।
মঙ্গলবার থেকে এই সভা ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডে শুরু হয়েছে। সভা শেষ হবে আগামী ১২ জুলাই। এই সভায় সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য থেকে বাদ দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ১৩ সদদ্যের একটি প্রতিনিধি দল এখন পোল্যাল্ডে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে তারা বলেছে, সুন্দরবনের পাশে বাংলাদেশ সরকার ও ভারত মিলে রামপালে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে। যেটি করলে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এছাড়া বনের ভেতর দিয়ে কয়লা ও জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ চলাচল করছে। এগুলোর কারণেও সুন্দরবনের ক্ষতি হচ্ছে। বনের ভেতরের বিভিন্ন নদীতে মাঝে মধ্যেই তেল, কয়লা ও সারবাহী ট্যাঙ্কার ডুবে বনের জীববৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি করছে। এগুলোর পেছনে সরকারের নিবর ভূমিকা রয়েছে। যে কারণে তারা সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।
সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বের ৪০টি পরিবেশবাদী সংগঠন সুন্দরবনকে বিশ্বের ঐতিহ্যির মর্যাদা থেকে বাদ দেয়ার জন্য খোলা চিঠি দিয়েছে ইউনেস্কোর ওয়াল্ড হেরিটেজ সেন্টারের কাছে। তারা চিঠিটি আমলে নিয়েছে। এটি ওই বৈঠকের আলোচনার সূচিতে রয়েছে।
কাউন্সিলের ৪১তম বার্ষিক সভার প্রস্তুতি বৈঠক শুরু হয়েছে ২ জুলাই থেকে। ৩ জুলাই তা শেষ হয়েছে। আজ (৪ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে মূল বৈঠক। এ সভায় সুন্দরবন নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে যেকোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে যাতে কোনো নেতিবাচক সিদ্ধান্ত না হয় সে জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সরকারি কর্মকর্তারা সেখানে অবস্থান করছেন। বৈঠকে সুন্দরবন নিয়ে কোনো নেতিবাচক আলোচনা হতে থাকলে তারা এর বিপরীতে সরকারের নেয়া উদ্যোগগুলো তুলে ধরবে।
সূত্রে জানা গেছে, গেল বছর রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প সুন্দরবনের জন্য ‘মারাত্মক হুমকি’ উল্লেখ করে কাউন্সিল। এই প্রকল্প বাতিল করে অন্যত্র সরিয়ে নিতে সরকারের প্রতি লিখিত আহ্বান জানায় ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার। এরপর সরকারের তরফ থেকে জবাব পাঠানো হয়। পরে ইউনেস্কোর একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে যায়। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পাঁচ মাস পর সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠায় সংস্থাটি।
এর আগে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কাউন্সিলের ৩৯ ও ৪০তম বার্ষিক সভায় রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের ক্ষতি করবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন বা ইআইএ করেছে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) নামের একটি সংস্থার মাধ্যমে। কিন্তু ওই ইআইএ আন্তর্জাতিক মানের হয়নি। তাতে সঠিক চিত্র উঠে আসেনি। রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে সেখানকার ইকো সিস্টেমের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইউনেস্কোর এমন মনোভাবের কারণে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কাউন্সিলের ৪১তম বার্ষিক সভাটি সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কাউন্সিলে অংশ নিতে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রদিনিধি দল।
বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল ও বন-সংলগ্ন এলাকায় দূষণকারী শিল্পকারখানা স্থাপনের ফলে এ আশঙ্কা করছে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র ।
জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো সরকারকে ২০১৪ সালের ১১ জুলাই চিঠি দিয়ে বলেছিল, বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় এই বনের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সরকার ব্যর্থ হলে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান হারাবে সুন্দরবন। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে সুন্দরবন নাম লেখাবে ‘বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের’ তালিকায়।
এছাড়া সুন্দরবন রক্ষায় কী উদ্যোগ নেয়া হবে তা উল্লেখ করে ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন চাইলেও কোনো উত্তর পায়নি ইউনেসকো।