রবিবার , ২ জুলাই ২০১৭ | ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. Featured
  2. অন্যান্য খেলার সংবাদ
  3. অন্যান্য ধর্ম
  4. অপরাদ
  5. অর্থনীতি
  6. অলটাইম নিউজ লেটার
  7. আইটি টেক
  8. আইন – আদালত
  9. আইন শৃংখলা বাহিনী
  10. আন্তর্জাতিক
  11. আবহাওয়া বার্তা
  12. ইসলাম
  13. উদ্যোগ এবং পরিবর্তন
  14. ওয়েবসাইট
  15. কবিতা

বরিশালের বাবুগঞ্জে সেচ্ছাশ্রমে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে নেমেছে এলাকাবাসী।।

প্রতিবেদক
Alltime BD News24 .com
জুলাই ২, ২০১৭ ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ

আরিফ আহমেদ মুন্না, বাবুগঞ্জ:

ষাটোর্ধ্ব ভ্যানচালক খলিল মিয়া ঈদের যাত্রী পরিবহন বাদ দিয়ে তার ভ্যানগাড়িতে বাঁশ টানছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবুল তার দোকান বন্ধ রেখে এসে সেই বাঁশ সাইজ মতো কাটছেন। মিস্ত্রি হানিফও অনুরুপভাবে নিজের রুটিরুজির কাজ ফেলে নদীপাড়ে বসে তৈরি করছেন বাঁশের খাঁচা। নিজেদের জীবন ও জীবিকার তাগিদ ভুলে এখন ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এমন অভিনব এক বিশাল কর্মযজ্ঞে। তবে এজন্য তাদের কোনো বেতন নেই। কিংবা নেই কোনো পারিশ্রমিক পাওয়ার বাসনা। স্বেচ্ছায় দেওয়া এই শ্রমের বিনিময়ে তাদের স্বপ্ন একটাই। বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর-মীরগঞ্জ-মুলাদী প্রধান সড়কটি সুগন্ধা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করা।

বাবুগঞ্জে এভাবেই নদী ভাঙনের কবল থেকে উপজেলার প্রধান সড়কটি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামবাসী। ভাঙন প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগের আশায় না থেকে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে চাঁদা তুলে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তৈরি করছেন পার্কোপাইন নামের বিশেষ প্রযুক্তির বাঁশের খাঁচা। ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের মাহাবুব হোসেন নামে এক তরুণ ব্যবসায়ীর ডাকেই শুরু হয়েছে ভাঙন উন্মত্ত নদীর বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর অনন্য এমন নজিরবিহীন এক যুদ্ধ। নদীর বিরুদ্ধে এই অসম যুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দা অধ্যাপক গোলাম হোসেনসহ একজন-দুজন করে এখন জড়িয়ে পড়েছেন গোটা ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের মানুষ। জড়িয়েছেন বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপক কুমার রায়। গতকাল শনিবার তারা নদী ভাঙন প্রতিরোধে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নির্মাণাধীন ওই পার্কোপাইন (বিশেষ প্রযুক্তির ইটভর্তি বাঁশের খাঁচা) তৈরি কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

এসময় সুগন্ধা নদীতীরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ শাহে আলম সিকদারের সভাপতিত্বে গ্রামবাসীদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় যুবক মোঃ মামুন হোসেনের সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির উপজেলা সম্পাদক টি.এম শাহজাহান, ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুজন আহমেদ, আওয়ামী বাস্তুহারা লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুর রহমান পিন্টু, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক আবদুল করিম হাওলাদার, কৃষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক গোলাম হোসেন, প্রবীণ শিক্ষক আবদুল হাকিম, যুবমৈত্রী সম্পাদক হাসানুর রহমান পান্নু, মন্টু হাওলাদার, রত্তন আলী ফকির, সিদ্দিকুর রহমান মানিক, মহসিন হাওলাদার, মনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

স্বেচ্ছাশ্রমে গঠিত এ অভিনব নদী ভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সমন্বয়কারী ও উদ্যোক্তা তরুণ ব্যবসায়ী মোঃ মাহাবুব হোসেন জানান, উপজেলার সবেচেয়ে বৃহৎ ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামটি এখন সুগন্ধা নদীর কড়াল গ্রাসে আক্ষরিক অর্থেই ক্ষুদ্র হয়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে বিভাগীয় সদর বরিশাল থেকে সড়ক পথে বাবুগঞ্জ, মুলাদী ও হিজলা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান সড়কটিও নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছে। ক্ষুদ্রকাঠি ইটভাটা সংলগ্ন এলাকায় নদী থেকে তিন উপজেলার যোগাযোগ রক্ষাকারী এই প্রধান সড়কটির দূরত্ব এখন ৫০ ফুটের কম। অথচ দীর্ঘদিন ধরে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ধর্না দিয়েও কোনো ফলাফল আসেনি। হাজার হাজার মানুষের বাড়িঘর আর অসংখ্য স্কুল-মক্তব-মসজিদ-মাদ্রাসা সরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় চোখের সামনে নদীবক্ষে হারিয়ে গেছে চিরতরে। তাই ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের শেষ সম্বল উপজেলার প্রধান কার্পেটিং সড়কটি রক্ষার জন্য চাঁদা তুলে এখন নিজেরাই যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ভাঙন রোধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি আমরা। প্রাথমিকভাবে কয়েকশ’ পার্কোপাইন নদীতে ফেলা হবে। এজন্য কেউ বাঁশ, কেউ ইট, কেউ লোহার পেরেক, কেউ অর্থ, কেউ বিনামূল্যে শ্রম দিচ্ছেন আর যে যেভাবে পারছে সেভাবে সাহায্য করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় এমন উদ্যোগকে অভাবনীয় এবং অনুকরণীয় উল্লেখ করে ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামবাসীর পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এদিকে এ প্রসঙ্গে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. শেখ মোঃ টিপু সুলতান বলেন, সুগন্ধা নদীর অব্যাহত ভাঙনে রহমতপুর-মীরগঞ্জ-মুলাদী সড়কটি ছাড়াও এখন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের দোয়ারিকা বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু এবং বরিশাল বিমানবন্দর রানওয়ের উত্তর প্রান্ত তীব্র ভাঙন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকল্পের মাধ্যমে থোক বরাদ্দ দিয়ে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে আপদকালীন ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এ উত্তাল নদীকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন প্রয়োজন নদী শাসন। এজন্য দরকার প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ের একটি মেগা প্রকল্প। বাবুগঞ্জের সুগন্ধা, সন্ধ্যা ও আড়িয়াল খাঁ নদী শাসনের জন্য এমন একটি বৃহৎ মেগা প্রকল্প গ্রহণের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

(Visited ৩ times, ১ visits today)

সর্বশেষ - অর্থনীতি