দুনিয়ার বেশিরভাগ ধনী টাকা রাখার জন্য সুইস ব্যাংক পছন্দ করেন। কিন্তু কোনো? ব্যাংকটির সুনামের পেছনে রয়েছে এর গ্রাহকের গোপনীয়তা বজায় রাখার কারণ। কে কতো অর্থ জমা রেখেছে, সেই তথ্য খুব একটা বেকায়দায় না পড়লে প্রকাশ করতে চায় না ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
অ্যাসোসিয়েশন অব সুইস প্রাইভেট ব্যাংকার্স এর প্রধান মিশেল ডি রবার্ট কয়েক বছর আগে বিবিসির কাছে বলেছিলেন, চিকিৎসক কিংবা আইনজীবী যেভাবে তার রোগী বা মক্কেলের বিষয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখেন, তারাও একইভাবে গ্রাহকের ব্যাপারে গোপনীয়তা বজায় রাখেন।
আর তাতেই বাজিমাত। ব্যাংকটি বিশ্বের ব্যাংকিং সেবার এক বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সেখানে রয়েছে প্রায় তিনশর বেশি ব্যাংক এবং আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে ক্রেডিট সুইস এবং ইউবিএস হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো।
উপন্যাস কিংবা চলচ্চিত্রেও দেখা যায় সুইস ব্যাংকগুলোতে নাম ছাড়াই অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো ভিত্তি নেই। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এরকম কোনো ব্যাপার তাদের ব্যাংকে নেই।
গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট হয়তো সংখ্যা দিয়ে উল্লেখ থাকে, তবে অ্যাকাউন্টধারীর পূর্ণ নাম, ঠিকানা তাদের কাছে অবশ্যই থাকে। গ্রাহকের পরিচয় কেবল ওই ব্যাংকের অল্প কয়েকজন জানবেন।
অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই গোপনীয়তা নীতি অনেকটাই কমিয়ে এনেছে সুইস ব্যাংক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চাপের মুখে তারা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
অনেকে সুইস ব্যাংক বেছে নেন কর ফাঁকি দেয়া, কিংবা দুর্নীতি বা অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ রাখার জন্য। বিশ্বের অনেক দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী বা নামকরা তারকা সুইস ব্যাংকে তাদের অর্থ পাচার করেছেন। এরকম সংবাদ গত দশকগুলোতে বহু বার গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। তা নিয়ে ব্যাংকটির ওপর চাপ বেড়েছে।
১৯৩০ এর দশকে জার্মানিতে যখন নাৎসীদের শুদ্ধি অভিযানের মুখে পড়েছিল ইহুদীরা; তখন ইহুদীদের অর্থ গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখার মাধ্যমে সুইস ব্যাংকগুলোর এই ব্যবসার শুরু।
গ্রাহকদের গোপনীয়তা রক্ষার আইন করা হয় ১৯৩৪ সালে। ফ্রান্সের কয়েকজন রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ী তাদের বিপুল অর্থ সুইস ব্যাংকে রেখেছিলেন। সেই তথ্য ব্যাংক থেকে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। এরপর সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নেয়।
এই গোপনীয়তা আইনের সুযোগে সুইস ব্যাংকগুলো ফুলে ফেঁপে ওঠে। তৃতীয় বিশ্বের দুর্নীতিবাজ স্বৈরশাসক থেকে শুরু করে মার্কিন কর ফাঁকি দেয়া বিত্তশালী ব্যবসায়ী, সবাই তাদের অর্থ গোপন রাখার জন্য বেছে নেন সুইস ব্যাংকগুলোকে।