রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার চার্জশিট এক বছরেও দাখিল করতে পারেনি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। কয়েক দফা পিছিয়ে সর্বশেষ চার্জশিট দাখিলের তারিখ ১৬ জুলাই ধার্য করা হয়েছে।
তদন্ত সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বলছে, মামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িতরা কেউ জীবিত নেই। ঘটনাস্থলেই তারা মারা গেছেন। তবে ঘটনার পরিকল্পনা ও সহযোগিতায় যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদেরও অনেকে পুলিশের সঙ্গে বন্ধুক যুদ্ধে মারা গেছেন। এই মুহূর্তে চারজন গ্রেফতার রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ বছরের মধ্যেই মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জনসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি।
নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন- ডিএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন। ওই রাতেই ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলার দায় স্বীকার করে।
পরদিন সকালে সেনা কমান্ডোদের পরিচালিত অপারেশন থান্ডারবোল্টে রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল নামে পাঁচ জঙ্গি মারা যান।
ওই ঘটনার পর গুলশান থানা পুলিশ মামলা দায়ের করে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পরবর্তীতে ডিএমপি’র কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, হলি আর্টিসান হামলায় সরাসরি জড়িতরা কেউ বেঁচে নেই। ঘটনার পরিকল্পনা ও সহযোগিতায় যাদের ভূমিকা ছিল তাদেরও অনেকে পুলিশের সঙ্গে বন্ধুক যুদ্ধে মারা গেছেন। গ্রেফতার রয়েছেন রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাসনাত করিম ওরফে রেজা করিম, রাজিব গান্ধি ও মিজান। তাদের মধ্যে দুইজন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড আরও পাঁচজনকে আমরা খুঁজছি। ২/১ জনকে গ্রেফতার করা গেলে তদন্তে নতুন মাত্রা পাবে। তদন্ত কার্যক্রম আমরা অনেকটাই গুছিয়ে এনেছি। আশা করছি এ বছরই তদন্ত কাজ শেষ হবে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, হলি আর্টিসানের ঘটনায় শিগগিরই নির্ভুল ও নিখুঁত চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে।
হামলার এক বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেই দিনটি আমাদের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। আমরা বুঝতে শিখেছিলাম, জঙ্গিরা কী চায়, কী তাদের উদ্দেশ্য, কারা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা, কারা অর্থায়ন করছে। সবকিছুই খুব সূক্ষ্মভাবে দেখা হচ্ছে। এ কারণে অভিযোগপত্র দিতে একটু সময় নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে নির্ভুল অভিযোগপত্র দেব। কোনো ত্রুটি ছাড়া অভিযোগপত্র দেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং খুব শিগগিরই অভিযোগপত্র দিতে পারব।’