২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার দৌড়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডেরমত দেশগুলোকে পেছনে ফেলে স্বত্ত্ব জিতে নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। এ নিয়ে তুলকালাম হয়ে গিয়েছে ফুটবল বিশ্বে। মার্কিন গোয়েন্দা পুলিশ এফবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে বিশাল বিশাল দুর্নীতির খবর। যার জের ধরে আমুল পরিবর্তন এসে গেছে ফিফায়। সেপ ব্ল্যাটার, মিশেল প্লাতিনি থেকে শুরু করে জাঁদরেল নেতারা হয়েছে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ।
এত বড় পরিবর্তনের পরও কেউ কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজক হওয়ার পেছনে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ খুঁজে বের করতে পারেনি। অবশেষে শোনা যাচ্ছে, কাতার যে ঘুষ দিয়েছিল, তার প্রমাণ খুঁজে পাওয়া গেছে। জামার্নির শক্তিশালী দৈনিক বিল্ড এ সম্পর্কে তথ্য প্রমাণ প্রকাশ করতে শুরু করেছে।
ফিফার স্বাধীন এথিক্স কমিটির সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল গার্সিয়া দীর্ঘ তদন্তের পর রাশিয়া এবং কাতার বিশ্বকাপের বিডিং প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন এবং এ নিয়ে তিনি ৪৩০ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করেছেন। মাইকেল গার্সিয়াকে ‘ভ্রান্ত তদন্তকারী’ আখ্যা দিয়ে ২০১৪ সালে তৎকালীন ফিফার নির্বাহী কমিটি, এথিক্স কমিটি থেকে বরখাস্ত করেছিল।
মাইকেল গার্সিয়ার রিপোর্টে উঠে এসেছে কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজক হওয়ার পেছনে ২০ লাখ ডলার অর্থমূল্যের ঘুষ ফিফার এক কর্মকর্তার ১০ বছরের কন্যার নামে দেয়া হয়েছিল। ফিফা এথিক্স কমিটিতে থাকাকালেই এসব তথ্য পেয়েছিলেন গার্সিয়া। তার ওপর ভিত্তি করেই ৪৩০ পৃষ্ঠার সেই রিপোর্ট তৈরি করেন ফিফার সাবেক এই কর্মকর্তা।
জার্মান পত্রিকা বিল্ড দাবি করছে, তাদের হাতে মাইকেল গার্সিয়ার পুরো তদন্ত রিপোর্টই এসে গেছে। এখন তারা এই রিপোর্ট ধীরে ধীরে প্রকাশ করতে থাকবে। আপাতত তারা রিপোর্টের সারাংশটা জানিয়ে দিয়েছে তাদের পাঠককে। সেখান থেকে এখন জানছে পুরো বিশ্ববাসী।
এথিক্স কমিটির দায়িত্বে থাকাকালেই কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনে ঘুষ লেন-দেনের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছিলেন মাইকেল গার্সিয়া। এরপরই মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে বহিস্কার করা হয়।
বিল্ড আরও দাবি করছে, ফিফার তিন সাবেক কর্মকর্তা কাতার ফুটবল ফেডারেশনের ব্যবস্থাপনায়, প্রাইভেট জেটে করে ৬ বছর আগে আয়োজক হওয়ার ভোটাভুটির ঠিক আগ মুহূর্তে রিও ডি জেনিরোতে একটি ডিনার পার্টিতে মিলিত হন। জার্মানির পত্রিকাটি আরও জানায়, কাতারের একটি ক্রীড়া সংগঠন, নাম এস্পায়ার একাডেমি, যারা আয়োজক হওয়ার পেছনে ফিফা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার দায়িত্বে ছিলেন- তারাও দুর্নীতির দায়ে সমানভাবে অভিযুক্ত।
কাতার এবং রাশিয়ার বিশ্বকাপ আয়োজক হওয়ার পেছনে ঘুষ লেনদেনের মহা অভিযোগ ওঠার পর নানা তদন্ত শেষে ফিফার স্বাধীন নৈতিক (এথিক্স) কমিটির প্রধান হ্যান্স জোয়াকিম একার্ট ২০১৪ সালের নভেম্বরে একটি রায় দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘কাতার এবং রাশিয়া- এই দুই দেশের আয়োজক হওয়ার পেছনে কোনো ঘুষ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ একই সঙ্গে কাতার এবং রাশিয়াকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকেও মুক্তি দিয়ে দেন।
মাইকেল গার্সিয়া তার রিপোর্টের শেষ অংশে এসে ফিফায় এখন নেতৃত্বের সংকট বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করেন। যদিও সেফ ব্ল্যাটারের বরখাস্তের পর সংস্থারই সাবেক কর্মকর্তা জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এখন ফিফার প্রেসিডেন্ট। আর ঘুষের অভিযোগ নিয়ে সুইস এবং ফ্রেঞ্চ প্রসিকিউটররা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।
মাইকেল গার্সিয়ার এই রিপোর্টটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন প্রতিবেশী দেশগুলো কর্তৃক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবরোধের মধ্যে অনিশ্চিত দিন পার করছে কাতার। এ নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিই গরম হয়ে উঠেছে। কাতার কর্তৃপক্ষ চিন্তায় পড়ে গিয়েছে, ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজনের ব্যাপারে। আর রাশিয়ায় তো এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বিশ্বকাপ আয়োজন হবে।
সুতরাং, নতুন করে ওঠা এই অভিযোগের পর নদীর পানি কতটুকু গড়ায় এখন এটাই দেখার বিষয়।