‘আতর-সুবাসে কাতর হ’ল গো পাথর-দিল/দিলে দিলে আজ বন্ধকী দেনা-নাই দলিল/কবুলিয়তের নাই বালাই।’ প্রাণে প্রাণে এমনই আবেগের বন্ধন নিয়ে ফের এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর।
দীর্ঘ এক মাস সংযমের মহিমায় সিয়াম সাধনার পর যেন বাঁধভাঙা আনন্দের প্রাপ্তি। সাম্যের শিক্ষায় বাংলাদেশের মুসলমানরা সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করছে সোমবার (২৬ জুন)। ঈদ মোবারক।
রবিবার সন্ধ্যায় ১৪৩৮ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় সোমবার ঈদ পালনের দিন নির্ধারিত হয় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায়।
রবিবারের সূর্য ডোবার পরই শুরু হয়ে গেছে শাওয়াল মাস, ঈদের দিন। ঈদের আনন্দে মেতেছে পুরো দেশ। পুরনো দুঃখ-ব্যথা ভুলে নতুন পোশাকে খুশির জোয়ার উঠছে প্রাণে প্রাণে। তবে নতুন পোশাকে শিশুদের ঈদ আনন্দটাই বেশি।
ঈদের দিন সকালে সারাদেশের মুসলমানরা ঈদগাহ ও মসজিদে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেছেন। সামর্থ্যবান মুসলমানেরা ফিতরার মাধ্যমে ঈদে গরীব-দুঃখীদের অর্থ ও নতুন বস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেন।
তবে কিছুদিন আগে পার্বত্যাঞ্চলে অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যুশোক কাটিয়ে ঈদে আনন্দ উদ্বেল হয়ে উঠতে পারবে না সেখানকার মানুষ। এরসঙ্গে রংপুরের পীরগঞ্জের বড়দরগায় ট্রাক উল্টে ১৭ জন পোশাক শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনাও গভীর বেদনায় স্পর্শ করেছে দেশবাসীকে।
এবার ঈদে ৫ দিনের ছুটি পেয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এজন্য শেষ অফিস গত ২২ জুন থেকেই শুরু হয়েছিল ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। সেই থেকে সাক্ষাতে, মোবাইলে, এসএমএসে, ফেসবুকে, মেইলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিয়ম চলছে। শুভেচ্ছা বিনিময় চলবে ঈদের পুরো দিন।
রাজধানী এখন চিরচেনা যানজট কোলাহলের রূপ হারিয়ে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়েছে। আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রেল, সড়ক ও নৌপথে রাজধানীর অসংখ্য মানুষ গ্রামে ছুটে গেছেন। পথে পথে পোহাতে হয়েছে নানান ভোগান্তি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার ঈদ যাত্রা অনেক দুর্ভোগহীন হয়েছে।
নতুন পোশাক পড়ে ঈদের দিন ধনী-গরিব, মালিক-শ্রমিক ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করছেন। বেড়াতে যাচ্ছেন একে অপরের বাড়ি, করছেন মিষ্টিমুখ। ঈদের দিন সেমাই, পায়েস, মিষ্টান্ন, কোরমা, পোলাও, খিচুরিসহ নানান পদের মুখরোচক খাবার রান্না হচ্ছে ঘরে ঘরে। শিশু-কিশোররা নতুন পোশাক পড়ে সালামি আদায়ে তৎপর। রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিকসহ সকল স্তরের মানুষ অংশ নেন।
গত বছর রমজানের শেষের দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও ঈদের দিন দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে এবার ঈদকে সামনে রেখে দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঈদের দিন বিকেল নাগাদ দেশের কোন স্থান থেকে অপ্রীতিকর কোন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
আষাঢ় মাস হলেও দেশের উপর মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) কম সক্রিয় থাকায় ঈদের দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে আগেই জানিয়েছিল আবহাওয়া অধিদফতর। সোমবার দুপুরে ঢাকার কয়েকটি স্থানে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার মাছুয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল গাফফার জানান, সোমবার সকালের দিকে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। তবে এ হালকা বৃষ্টি উৎসবে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেনি।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আলাদা বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে ও প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে করেছেন।
শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলোতে রবিবার ঈদুল ফিতর পালিত হয়েছে। এদিকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রবিবার বাংলাদেশেরও কয়েকটি জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঈদুল ফিতর পালন করা হয়েছে।
ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। ঈদের দিন উপলক্ষে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা-সরকারি ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে শোভা পাচ্ছে আরবি ও বাংলায় ঈদ মোবারক লেখা পতাকা।