ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের প্রত্যাশা আর প্রস্তুতির কমতি থাকে না। একের পর এক ঈদ আসে যায়, প্রবাসীদের ঈদ রয়ে যায় নিঃসঙ্গতায় ভরা। প্রবাসীদের ঈদ উদযাপন ভিন্নরকম। প্রবাসে অনেকেই আছেন যাদের জন্য ঈদের দিনটাও কষ্টকর।
কুয়েতে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা হাসাবিয়া ও কুয়েতে সিটির সুক ওয়াতানিয়া একাধিক প্রবাসীর বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয়। জানতে চাওয়া হয় প্রবাসে ঈদ পালন সর্ম্পকে তাদের অনুভূতি কী?
জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তারা জানিয়েছেন ঈদ অনুভূতি মনের ভেতরে জমানো না বলা কথা। আর তাতে উঠে এসেছে পরিবারকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট আর যন্ত্রণার সুর।
কুয়েতে সিলেট প্রবাসী কবি জামিল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার অনুভূতিগুলো কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করেন।
‘ঈদ এসেছে সবার মনে খুশি
প্রবাসীদের ঈদের দিনেও কেন
থাকে না একটু মনে হাসি।
বছর ঘুরে আবার এল ঈদ
পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে
প্রবাসীদের হয় না কিন্তু ঈদ।
ঈদের দিনেও লেগে থাকে কাজ
পরিবারের মুখের দিকে চেয়ে
ভুলে যায় ঈদ ছিল আজ।’
কুয়েতের কয়েটি স্থানে ঘুরে গত এক বছরে নতুন যারা এসেছে তাদের বেশিরভাগ তরুণ। পরিবারের সুখ ও সচ্ছলতার আশায় কুয়েতে আসা জুয়েল, রনি, মারুফ, আলমগীর, রবিউলসহ তাদের কয়েক জনের সঙ্গে আলাপকালে জাগো নিউজকে বলেন, প্রবাসে প্রথম ঈদের অনুভূতির কথা আসার পর থেকে যতটা খারাপ লাগেনি ঈদের দুই দিন আগ হতে খুব খারাপ লাগছে। ঈদে দেশের কাটানো স্মৃতি পরিবার-পরিজন ছাড়া প্রবাসে প্রথম ঈদ সবাইকে অনেক মিস করছি।
পরে জানতে চাওয়া হয় কীভাবে কাটাবেন ঈদের দিন কেউ বলে আমার ডিউটি আছে, কেউ বলেন নামাজ পড়ে ঘুমাব, কেউ বলেন সকালে ঘুমাব বিকেলে বেলায় ঘুরতে যাব। কেউ বলেন পরিচিত লোকজন আছে তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাব।
ঈদের কেনাকাটা সর্ম্পকে জানতে চাওয়া হলে অনেকে জানান, এখানে কাপড়-চোপড়ের অনেক দাম। আসার সময় দেশ হতে নিয়ে এসেছি। ব্যবহার করিনি যেগুলো তা দিয়ে চালিয়ে নেব। মনে করেছিলাম কিছু একটা কিনব কিন্তু দেশের তুলনায় এখানে অনেক দাম। কম বেতনে চাকরি করি, চিন্তা করলাম না কিনলেও চলবে এই ঈদে।
জানা গেল, শত কর্মব্যস্ততার মাঝে ঈদের ছুটিতে লম্বা ঘুম অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদের দিনে মূল কর্মসূচি।
ঈদের নামাজ শেষে দেশে ফোন করে পরিবার-পরিজনদের খোঁজ-খবর নেয়ার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা যেন আরও বেড়ে যায়। বুকফাঁটা যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে বিছানায় যেয়ে চোখের পানিতে বালিশ বিজিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেন অনেকে। আর এরপর দুপুর গড়িয়ে পূর্বের সূর্যটা পশ্চিমে যখন হেলতে শুরু করে। তখন বিছানা ছেড়ে অনেকেই বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করতে যান।
বেশিরভাগ প্রবাসী বাঙালি অধ্যষিত এলাকায় বা হাসাবিয়া ও সিটির সুক ওয়াতানিয়ায় এসে মিলিত হন। দুপুরের পর থেকে ভিড় বাড়তে থাকে সন্ধ্যায় সেখানে পরিণিত হয় মিলন মেলায়। কেউ আবার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সামান্য আনন্দের প্রত্যাশায় পার্কে আড্ডা দিয়ে বা প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্য উপভোগ করতে নিরিবিলি স্থানে সাগর পাড়ে ঘুরতে যায়। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ নামের নিঃসঙ্গ বেদনার দিনটি।