কাতারের সংকট নিরসনে ১৩টি শর্ত দিয়েছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করতে হবে। তবে সেই শর্তগুলোকে বাস্তবতা বিবর্জিত এবং বাস্তবায়ন অযোগ্য বলে জানিয়েছে দোহা।
গত ৫ জুন দোহার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পরপরই সৌদি আরব, সংযুক্ত অারব আমিরাত, মিসর ও বাহরাইনে আল জাজিরার প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়ে কার্যালয়ও বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু কেন সংবাদ মাধ্যমটি সৌদি জোটের কাছে এতোটা অপ্রিয় হয়ে উঠেছে, সেটাই এখন গবেষণার বিষয়।
১৯৯৬ সালে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমটি যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ সময়ে আরব বিশ্বের দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেলে পরিণত হয় আল জাজিরা।
তিন কোটি ১০ লাখ মানুষ সংবাদমাধ্যমটির পাঠক, দর্শক। শতাধিক দেশে আল জাজিরার সংবাদ প্রচার, সম্প্রচার হয়। তিন হাজারের বেশি কর্মী প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করে আসছেন।
ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংবাদ সম্প্রচার করে বরাবরই পাঠক, দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চ্যানেলটি। ৯/১১ তে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর চ্যানেলটি জনপ্রিয় হতে থাকে।
কাতারে আল জাজিরা চালুর সময় তৎকালীন আমির হামাদ বিন খলিফা অাল থানি সাংবাকিদের বলেছিলেন, তারা যা দেখবেন, যেনো সেটাই সংবাদ আকারে প্রকাশ করেন। আল জাজিরার দাবি, তারা এখন পর্যন্ত স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে আরববিশ্বের সংবাদ সম্প্রচার করে আসছে।
২০০৬ সালে এসে চ্যানেলটির ইংরেজি ভার্সন চালু করা হয়। ৭০ টির অধিক দেশে তাদের ব্যুরো অফিস রয়েছে। ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদ চ্যানেল চালু করে আল জাজিরা। কিন্তু গত বছরে এসে তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
পাঁচ শতাধিক কর্মীকে ছাঁটাই করতে হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই কাতারের সাংবাদিক। বিজ্ঞাপন কমে যাওয়ার কারণে তাদের এই সংকট তৈরি হয়েছে। আর বিজ্ঞাপন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তেলের মূল্য হ্রাসের কথা বলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমটিতে বেশ কিছু সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। তাতে কাতারকে নিজের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে চলার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এমনকি কিছু বিষয় ধরে ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনও করা হয়েছে।
এর আগে আরব বসন্ত শুরু হলে পরিবর্তনের পক্ষ নিয়েছিল আল জাজিরা। মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্বে মিসরে ক্ষমতায় এসেছিলেন নির্বাচিত সরকার। কিন্তু বর্তমানে এসে আরব বসন্তের সময় মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সমর্থন জানানোর ব্যাপারে আল জাজিরার সমালোচনা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে মিসরে আল জাজিরার তিনজন সাংবাদিককে কারাদণ্ড পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
ইসলামিক স্টেট (আইএস), মুসলিম ব্রাদারহুডসহ জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সমর্থন ও তাদের মতাদর্শ সম্প্রচারের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তবে আল জাজিরার দাবি, তারা কোনো রকম পক্ষপাতিত্ব করে না। কোনো সংগঠন, গোষ্ঠী কিংবা রাষ্ট্রকে তারা সমর্থন করে না। কেবল যা কিছু সত্য হিসেবে দেখে যায়, তাই তুলে ধরা হয়।
আল জাজিরা আরও বলছে, ব্যাপার আসলে কিছুই না। স্বাধীনভাবে কোনোকিছু আরববিশ্বের লোকজনকে দেখানো হোক, দেশগুলো সেটা চায় না। তারা চায় জনগণ বিষয়গুলো না জানুক। সেকারণেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরাও বেশ উদ্বেগের মধ্যে আছেন। আল জাজিরায় কর্মরত সাংবাদিকরা এক রকম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। ব্রিটেনে ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টের পক্ষ থেকে সৌদি জোটের দাবির প্রতি নিন্দা জানানো হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যাপারে এটা লজ্জা বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান