প্রায় দেড়শ বছর আগে থেকে পৃথিবীতে ফুটবল খেলা শুরু হয়েছে। এই সময়ে অনেক ভালো খেলোয়াড় বড় বড় রেকর্ড গড়েছেন। ভালো খেলা দিয়ে মানুষের মন জয় করে রেখেছেন যুগ যুগ ধরে। অনেকেই আবার নিজেদের কাজের দ্বারা ফুটবল কে করেছে কলঙ্কিত। তবে খুব কম খেলোয়াড় আছেন যারা সুন্দর খেলা ও মার্জিত ব্যবহার দিয়ে মানুষের মন জয় করে রেখেছেন। এই খুব কমের মধ্যে সেরা হলেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। যিনি তার অসাধারণ সুন্দর, জাদুকরী খেলা দিয়ে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছেন গোটা ফুটবল বিশ্বকে। বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ফুটবলারের জন্মদিন আজ।
১৯৮৭ সালের এই দিনে লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্মগ্রহণ করেন। মেসির পরিবারের আদি নিবাস ইতালির আকোনা শহরে। চার ভাই-বোনের মধ্যে মেসির বড় দুই ভাইয়ের নাম রদ্রিগো ও মাতিয়াস এবং ছোট বোনের নাম মারিয়া সল।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। মেসির প্রথম কোচ তার বাবা হোর্হে। এরপর ১৯৯৫ সালে তিনি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলা শুরু করেন। ১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের (growth hormone) সমস্যা ধরা পড়ে। স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট আগ্রহ দেখালেও সেসময় ক্লাবটি মেসির চিকিৎসা খরচ বহন করতে অপারগ ছিল। এ চিকিৎসার জন্যে প্রতি মাসে প্রয়োজন ছিল ৯০০ মার্কিন ডলার।
বার্সালোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। ফলে বার্সালোনা মেসির চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে হাতের কাছে কোনো কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে মেসির বাবার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন তিনি। তাররপর মেসি এবং তার বাবা বার্সালোনায় পাড়ি জমান।
বার্সেলোনার জার্সিতে তার অভিষেক হয় ১৬ অক্টেবর ২০০৪ সালে। ক্ষুদে মেসির বয়স তখন ১৭ বছর ৩ মাস ২২ দিন। অভিষেকের সাত মাস পর ক্লাবের জার্সিতে প্রথম গোল পান এই ওয়ান্ডার কিড। ১ মে ২০০৫ ঘরের মাঠ ন্যূ-ক্যাম্পে আলবাকেট ক্লাবের বিরুদ্ধে প্রথম গোল। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
২২ বছর বয়সেই তরুণ মেসি ব্যালন ডি অর এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জন করেন। বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হন ২৪ বছরে। এরপর ২৫ বছর বয়সে লা লিগায় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে দুইশ’ গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি।
২০১৬ সালে ক্লাবও জাতীয় দলের গোল মিলিয়ে মেসি তার ক্যারিয়ারের পাঁচশ’ তম গোল করেন। এ বছরেই তিনি লা লিগায় সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার খ্যাতি অর্জন করেন। ফুটবলের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি টানা চারটি ব্যালন ডি অর পুরস্কার জিতেছেন। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি চারটি ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট পুরস্কার জিতেছেন। বিতর্ক থাকলেও অনেকেই তাকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে দাবি করে থাকেন।
এছাড়াও ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে আটটি লা লিগা, তিনটি কোপা দেল রে, পাঁচটি স্পেনীয় সুপার কোপা, চারটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, দুইটি উয়েফা সুপার কাপ এবং দুইটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ চারটি হ্যাট্রিকের রেকর্ডও এই ফুটবল জাদুকরের ঝুলিতে।
ক্লাবের হয়ে সব কিছু জেতা মেসি জাতীয় দলের হয়ে এখনো বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেননি। তবে একক প্রচেষ্টায় ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনাকে ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে তোলেন তিনি। এরপর ২০১৫ কোপাতেও দলকে ফাইনালে তোলেন। পরেরবার কোপার শতবর্ষী টুর্নামেন্টেও দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। তবে আগেরবারের মত ওই বারও ফাইনালে চিলির বিপক্ষে হেরে আবারও শিরোপা বঞ্চিত হয় দলটি।
এদিকে জন্মদিনের ঠিক ছয় দিন পর আগামী ৩০ জুন দীর্ঘদিনের বান্ধবী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোর সঙ্গে বিয়ের বাঁধনে বাঁধা পড়তে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। তাদের সংসারে দুই ছেলে থিয়েগো ও মাতেও।