‘ধান নদী খাল এই তিনে বরিশাল। খাল বরিশালের যোগাযোগ ব্যবস্থার এক অসাধারণ পথ ছিল। কৃষকরা তাদের ফসল নৌকায় করে নিয়ে আসতেন শহরে। অগণিত খাল ছিল বরিশাল শহরে। আজ হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া সবই প্রায় মৃত। আর যে কয়টি জীবিত খাল আছে তাও ধংসের পথে। ‘মাননীয় জেলা প্রশাসক স্যার, আপনার সুপরিকল্পনাগুলোর মাঝে আশাকরি খাল রক্ষা ব্যবস্থা অন্তর্ভূক্ত করে খালের বরিশালকে বিদ্যমান রাখবেন। আশাবাদী নাগরিক।’ রুমকি নামের একজন ‘বরিশাল- সমস্যা ও সম্ভাবনা’ ফেসবুক গ্রুপে এই পোস্টটি দিয়েছিলেন। রুমকির সেই পোস্ট প্রশাসনসহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ‘জনগণের অংশগ্রহণে কিভাবে জনগণের জেলখাল পুনরুদ্ধার করা যায়?’ এমন একটি ধারণা দিয়ে জেলা প্রশাসক গ্রুপটিতে একটি মন্তব্য পোস্ট করেন। এই পোস্টের মাধ্যমে জেলা প্রশাসন লাইক-কমেন্টের দ্বারা ব্যাপক হারে জনগণের সাড়া পেতে শুরু করে। এতে জনগণের মাঝে নতুন উত্সাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
সবচে’ বেশি সমর্থন আসতে থাকলো ফেসবুক থেকে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তখন বিলম্ব না করে খাল পরিচ্ছন্নতা অভিযানের আয়োজন করা হয়। জনগণকেও অভিযানে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়। দলে দলে মানুষ এতে সাড়া দিতে থাকে। এভাবেই একটি দখল হওয়া খাল উদ্ধার হয়।
এই সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার ‘বরিশাল- সমস্যা ও সম্ভাবনা’ নামক ফেসবুক গ্রুপটির ধারণা যার মাথা থেকে এসেছে এবং যিনি এই গ্রুপটি তৈরি করেন তার নাম দিপু হাফিজুর রহমান। এখন পর্যন্ত এই গ্রুপের মাধ্যমে বরিশাল জেলার বহু সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিছু মানুষ আছে যারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়। বরিশালের দিপু হাফিজুর রহমান এমনই একজন। সমাজসেবায় এমন তরুণের এই সময়ে খুব একটা দেখা মেলে না বললেই চলে। এখন পর্যন্ত ৭০ বার রক্ত দিয়েছেন দিপু।
২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ‘বরিশাল- সমস্যা ও সম্ভাবনা’ ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে নাগরিক-সরকারি দপ্তরের সমন্বয়ে নাগরিক সেবা বৃদ্ধিতে জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেন দিপু। বর্তমানে এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৮১ হাজার। এই কনসেপ্ট গ্রহণ ও ব্যবহার করে এটুআই-এর মাধ্যমে দেশের আরো প্রায় ৪০টি জেলায় ফেসবুক গ্রুপ করা হয়েছে। ইউএন-ডেসা ফেসবুকের মাধ্যমে নাগরিক সেবা বৃদ্ধির এই কনসেপ্ট ভিজিট করে অন্যান্য দেশে ছড়ানোর জন্য কাজ করছেন তিনি।
৫ বছর বয়সে প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন দিপু। সেই থেকে পুরো শিক্ষা জীবন ছিলেন নাটকের সঙ্গে। ব্রজমোহন থিয়েটারের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। অভিনয় ছাড়াও নাটক লেখা ও নির্দেশনায়ও ছিলেন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ‘কাউর’, ‘মাত্রা’সহ বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেছেন। বিভিন্ন পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালেখি করেন।
দিপু গেছেন দেশের সবকটি জেলায়। এছাড়া সার্কভুক্ত ৩টি দেশ বেড়ানো হয়েছে তার। অসুস্থ, দরিদ্র, দুর্গতদের জন্য আর্থিক সাহায্য সংগ্রহের কাজ নিয়মিত করে থাকেন। ১০টি গ্রামে পাঠাগার ভিত্তিক সংগঠন ‘লোককেন্দ্র’ স্থাপন করেছেন।
রক্তের গ্রুপ নির্নয় ও রক্ত সংগ্রহ সংগঠন ‘সহযোগ’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। ২০১১ সালে ফেসবুকে রক্তের গ্রুপ পুলের মাধ্যমে ২০ হাজার মানুষের ডাটা সংগ্রহ করেন। এই পুলের মাধ্যমে নিয়মিত রক্ত দিয়ে সহায়তা করেন মানুষকে।
নিরাপদ সড়ক আমাদের অধিকার, বরিশাল পাবলিক স্কয়ারের নাম হিরন স্কয়ার আন্দোলন, নারী নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদ, সরকারি বরিশাল আর্ট গ্যালারী প্রতিষ্ঠা, স্পিড ব্রেকারে নাগরিক উদ্যোগে রং করা, বরিশাল জেলখাল পুনরুদ্ধার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ, একটি দিন শিশুকে দিন আন্দোলন, সিটিজেন জার্নালিজমের প্রসার, সিটিজেন ভলান্টিয়ারিজমের আইডিয়া, সোশ্যাল লিডারশিপ, সোশ্যাল এক্টিভিস্ট, সোশ্যাল মুভমেন্টসহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন জেলায় এবং বিভিন্ন সংগঠনের আমন্ত্রণে প্রশিক্ষক হিসেবে বর্তমানে কাজ করেছেন তিনি।