অন্যান্যবারের চেয়ে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রায় ভোগান্তি কম বলে দাবি করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার (২৩ জুন) রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ভিজিলেন্স টিম এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ দাবি করেন।
বেলা ৩টায় টার্মিনাল এলাকায় মন্ত্রীর আসার কথা থাকলেও তিনি আসেন দেড় ঘণ্টা দেরিতে বিকেল সাড়ে ৪টায়।
পরিদর্শনের পর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘এবারকার ঈদে ঘরমুখো যাত্রা অন্যান্য কয়েকবারের চেয়ে অনেক ভাল। এবং আমি বলব স্বস্তিদায়ক। ভোগান্তি গত কয়েকবারের তুলনায় এবার কম হচ্ছে। আজ পর্যন্ত এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কোথাও যানজট নেই। দু’একটি জায়গায় ধীর গতি আছে আবার পূর্ণ গতিও পাচ্ছে। কোথাও গাড়ি থেমে নেই। কোথাও যানজট নেই।’
তিনি বলেন, ‘টার্মিনালগুলোতে ভীড় আছে। অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগ কিছু কিছু আছে। এখানে (সায়েদাবাদে) একটি কাউন্টার বন্ধ করা হয়েছে। এবং আমি নিজেও একটি কাউন্টারে গিয়ে অতিরিক্ত ভাড়ার একটি অভিযোগ পেয়েছি।’
‘আমি একটি গাড়িতে উঠেছি, সেখানে যাত্রীদের জিজ্ঞেস করেছি সেখানে তারা কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে কোন অভিযোগ করেনি।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে আমাদের দিনরাত ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং, হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ, আমাদের বিআরটিএ, অন্যান্য যেসব সংস্থা, সিভিলিয়ানরা কাজ করছে, মালিক-শ্রমিকরা কাজ করছে সবার সম্মিলিত প্রায়াসে এবারকার যাত্রা অনেক স্বস্তিদায়ক হচ্ছে।’
‘খুব বেশি দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে আগামীকালও আশা করি এভাবে স্বাভাবিকভাবে এবারকার ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার গন্তব্যে যারা পৌঁছেছেন এমন অনেক যাত্রী আমাকে ফোন করেছেন। তারা বলেছেন, এবার তারা অনেক ভালভাবে এসেছেন। রাস্তা ভাল, অন্যান্য অনেকবারের চেয়ে এবার রাস্তা অনেক ভাল।’
ঢাকা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা সড়ক ও দাউদকান্দি সেতুর আশেপাশের এলাকায় যানজটের খবর পাওয়া যাচ্ছে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ওখানে এখন কোন যানজট নেই, প্রেসার আছে। এ সময়ে প্রেসার থাকবে আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। গাড়ির চাপ বেশি, গাড়ির ট্রাফিক ভলিয়্যুম বেশি, প্রেসার আছে। তবে কোথাও গাড়ি থেমে নেই।’
৫০টি বিআরটিসি গাড়ি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এ পর্যন্ত কোন দাবি আসেনি, স্ট্যান্ডবাই গাড়ি আমাকে কোথাও পাঠাতে হয়নি। কারণ রাস্তায় গাড়ি আটকে থাকলে স্ট্যান্ডবাই গাড়ি পাঠানো হয়। এবার সেই চাপে আমরা নেই।’
সায়েদাবাদ টার্মিনালে অনেক গাড়ি কিন্তু কাউন্টার থেকে গাড়ি নেই বলে সংকট সৃষ্টি করে টিকেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি যাতে না করে সে ব্যাপারে আমি মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কোন অভিযোগ এলে আপনারা সরাসরি আমার দুইজন পিআরও আছে তাদের কাছে জানাবেন আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বৃষ্টি-বাদল খুব না হলে কালও প্রবলেম হবে না বলে আমি আশা করি। রাস্তা তো ভাল, এবার অনফিট গাড়ি রাস্তায়…এখন পর্যন্ত খুব কমই নষ্ট হয়েছে।’
‘তবে কিছু কিছু জায়গায় আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার। আমি রেলমমন্ত্রীকে ৬ ঘণ্টা আগে অনুরোধ করেছি সামান্য একটু কাজের জন্য প্রবলেমের জন্য, জুরাইনে রাস্তায় চলাচল…গাড়িগুলো খুবই অচল অবস্থা হয়ে গেছে। সামান্য একটু জায়গা। কিন্তু উনি বলেছেন ওনার রেলের লোকজনকে। তারা এখন পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আসেনি’ বলেন কাদের।
তিনি বলেন, ‘আমি আবারও তাদের বলব জনগণের এ সময়ে প্রত্যেকের যার যার দায়িত্ব পালন করা উচিত।’
ঈদের আগের রাত পর্যন্ত কি আপনি মাঠে থাকবেন- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, ‘আই অ্যাম প্রিপেয়ারিং ফর দ্য ওয়াচ, অ্যান্ড হোপিং ফর দ্য বেস্ট।’
এবার চাঁদাবাজির অভিযোগও গতবারের তুলনায় অনেক কম দাবি করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের এটুকু বলতে পারি আমরা মনিটরিং করছি স্ট্রংলি, এজন্য এগুলো রিডিউস হচ্ছে। সবাই চকবাজার মসজিদের ইমাম নয়, কাজেই সবাই ভাল মানুষ হবে এমন আশা করবেন না। কিছু কিছু বিচ্যুতি আছে। এগুলো আমরা কেইস টু কেইস অবশ্যই দেখব।’
মন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় একজন যাত্রী এসে ইলিশ পরিবহনের একটি টিকেট মন্ত্রীর হাতে দিয়ে জানান, ৭১ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা নিয়েছে।
মন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের টিকেটটি দিয়ে ওই পরিবহনের কাউন্টার এখনই বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।