!! একটি শিক্ষনীয় গল্প !!
লেখকঃ আর.এম।
মিহাজ সাহেব বাজারে গিয়ে সামান্য কিছু কেনাকাটা করছে কেবল এরমধ্যেই ছোট্র এক শিশু তার কাছে এসে বলল স্যার, ব্যাগটা আমারে দ্যান, আমি রিকসায় উঠাইয়া দিয়া আসি ।
কথাটা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে গেল মিহাজ সাহেব। কারণ এই বাজারে এরকম দেখা যায় না। বড় বড় বাজারগুলিতে , কিছু ছোটো ছোটো অনাথ বা পথ শিশুরা সামান্য কিছু টাকার জন্য এভাবে বাজারের ব্যাগ বয়ে বেড়ায়।
মিহাজ সাহেবঃ আমার বাজার তো শেষ হয়নি, আরও কিছু কিনবো। এতো ভারী ব্যাগ তুমি নিতে পারবে না ।
তার কথা শুনে ছোটো মুখটা মলিন হয়ে গেল মনে হয় । ছোটো ছেলে । বয়স ছয় কিংবা সাত হবে। হয়তো ছেলের বয়সী। সে ভাবছে এই বয়সে আমার ছেলেকে একা বাইরে বের হবার কথা ভাবতেই পারিনা। এখনও পায়খানা করলে আমাকেই পরিস্কার করে দিতে হয় । আর এই এক রতি একটা ছেলে বাজারে ভারী ভারী ব্যাগ বহন করতে এসেছে কিছু টাকার জন্য । তার খুব মায়া হলো ।
–মিহাজ সাহেবঃ ঠিক আছে, ব্যাগটা ধরো । আর আমার সাথে এসো বলেই ব্যাগটা ওর হাতে দিল। তখনও ব্যাগটা হাল্কাই ছিল । কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যাগের ওজন বেড়ে ওর বহন ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করলো । বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে যখন ব্যাগটি বহনে ব্যার্থ হলো। মিহাজ সাহেব ওর দিকে তাকাতেই একটা নিষ্প্রাণ হাসি হাসলো। তিনি ব্যাগটি ওর কাছ থেকে নিয়ে নিল।
মিহাজ সাহেবঃ– তুমি আার পারবে না। আমাকে দিয়ে দাও।
কিছুটা অনিচ্ছা সত্তেও ব্যাগটি দিয়ে দিলো। মিহাজ সাহেব ছেলেটির মাথায় হাত দিয়ে বলল,
– সকালে কিছু খেয়েছো?
– না, মাথা নেড়ে জানালো।
এর মধ্যে বাজার করা শেষ। এখন বাসায় যাবার পালা। মিহাজ সাহেব প্রতিবার বাজার শেষ করে সরাসরি বাসায় যায়। আজ একটু ব্যতিক্রম। ছেলেটিকে নিয়ে একটা হোটেলে ঢুকল।
মিহাজ সাহেবঃ-কী খাবে?
ছেলেটি কোন উত্তর দিলো না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
– ঠিক আছে। আমি বলছি।
মিহাজ সাহেব হোটেল বয়কে ডেকে ছেলেটাকে কিছু খাবার দিতে বলল। আর তিনি নিলেন চা । খেতে খেতে ছেলেটির সাথে অনেক কথা হলো ।
মিহাজ সাহেবঃ-কী নাম তোমার?
ছেলেটিঃ– হৃদয়।
মিহাজ সাহেবঃ– বাহ! খুব সুন্দর নাম। নামটা কে রেখেছিলো, জানো?
হৃদয়ঃ– আমার মায় রাখছিলো।
মিহাজ সাহেবঃ– তোমার মা তোমাকে অনেক আদর করেন?
প্রশ্নটা করতেই হৃদয় মিহাজ সাহেবের দিকে তাকালো । চোখ দুটো জলে ছলছল করছিলো। ছোট মিষ্টি একখানা মুখ। হঠাৎ করেই যেন কালো মেঘে ঢেকে গেলো ।
মিহাজ সাহেবঃ– কী হলো হৃদয়, মায়ের কথা বলো।
কেঁদে ফেললো হৃদয় । ফাঁপা কান্না। আর সেই কান্নাভরা কণ্ঠে বললো-
হৃদয়ঃ– আমার মায় মইরা গেছে।
মিহাজ সাহেব উঠে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিলো। এতক্ষণ যে কান্না ছিল ফাঁপা এখন যেন সেটা বিস্ফোরিত হলো । ওকে শান্ত করে খাওয়া শেষ করতে বলল মিহাজ সাহেব। ওর খাওয়া শেষ হলে কিছু টাকা দিল মিহাজ সাহেব।
পরের দিন ছিল শনিবার । কোন এক কারণে আবারও মিহাজ সাহেবঃ গিয়েছিল সেই বাজারে। অনেক খুঁজল সে ছেলেটিকে । ওকে পেল না। হঠাৎ মনে হলো গতকাল যে দোকানটিতে ও ব্যাগ নিয়েছিলো ওরা তো আমার পরিচিত। ওই দোকানের কর্মচারী ওর নাম বলাতে চিনে ফেললো এবং ওর বাসাতেও নিয়ে গেলো । সৌভাগ্যবশত হৃদয়ের বাবার সাথেও দেখা হয়ে গেলো । ওর বাবার সাথে অনেক কথা হলো।
হৃদয়ের মা মারা গেছে বছরখানেক আগে। ওর বাবা রিকসা চালায়। বছর না ঘুরতেই আরেকটি বিয়ে করেছে । এমনিতেই গরীব বাবার সন্তান তার ওপরে ঘরে সৎ মা। এই অবস্থায় হৃদয়ের মতো একটি শিশুর কি রকম অসহায় অবস্থা হতে পারে তা অনুমান করা খুব কষ্টসাধ্য কিছু নয়। যে শিশুরা খুব অল্প বয়সে মাকে হারিয়ে ফেলে তাদের মতো হতভাগ্য আর কেউ নেই। বাবা বেঁচে থাকলেও সব বাবার সেই যোগ্যতা থাকে না মায়ের অভাব পূরণ করার।
মিহাজ সাহেবঃ হৃদয়ের বাবাকে বলেল হৃদয়কে কোন শিশু পরিবার অথবা মাদ্রাসায় দেয়ার জন্য। প্রথমে রাজি হয়নি । পরে বুঝিয়ে বলাতে রাজি হলো একটি মাদ্রাসায় দেয়ার জন্য। মিহাজ সাহেবের এলাকায় একটি এতিমখানা মাদ্রাসা আছে । সে মাদ্রাসার হুজুরের সাথে কথা বলে সেখানে ভর্তি হবার সব ব্যবস্থা করল । তার কাছে হৃদয়ের বর্তমান অবস্থার চাইতে মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়া বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। কারণ, অভাবের টানে তাঁকে এখনই শিশুশ্রমে নামতে হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নামা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এতো গেলো একজন হৃদয়ের কথা। এরকম হাজার হাজার হৃদয় আছে, যারা আশ্রয়হীন, অন্নহীন, বস্ত্রহীন। বেঁচে থাকার তাগিদে তাদের অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হচ্ছে । অনেক অসৎ লোক এদের ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার করছে । কি হবে ওদের? কে দাঁড়াবে ওদের পাশে? দায়িত্ব কিন্তু আমাদেরই । আমাদের একজন যদি হৃদয়ের মতো একজনেরও পাশে দাঁড়ায় তাহলেই অনেক হৃদয়ের একটা গতি হবে ।
একটা বাংলা গান আছে যা হৃদয়ের মতো অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়াতে অনুপ্রেরণার একটি উৎস হতে পারে । গানটা হচ্ছে – ‘বলো কি তোমার ক্ষতি , জীবনের অথই নদী, পার হয় তোমাকে ধরে, দুর্বল মানুষ যদি’ । তাই আসুন শপথ নেই জীবনে অন্তত একজন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবো ।