মাগফেরাতের দশক শেষ। শুরু হলো জাহান্নামে আগুন থেকে নাজাতের দশক। এই দশকে আল্লাহ সব রোজাদার বান্দাহকে রহমত দিয়ে বরণ করে জীবনের যাবতীয় গোনাহ থেকে ক্ষমা করে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত দেবেন। আর প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুমিন মুসলমানের আশাও তাই।
শেষ দশকে আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাগণ দিন-রাত মসজিদে অবস্থান করে তাঁর নৈকট্য অর্জন তথা লাইলাতুল ক্বদর তালাশে নিমগ্ন থাকেন।
এ যেন দুনিয়াতেই জান্নাতি আবহ বিরাজমান। মুসলিম উম্মাহর উচিত নাজাতের দশকের শ্রেষ্ঠ নেয়ামত লাইলাতুল কদর অন্বেষনে ই’তিকাফে ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রোজাদারের করণীয় হলো-
>> রোজাদার রোজার পরিপূর্ণ হক যথাযথ আদায় করবে। দিনের বেলায় পানাহার ও প্রিয়তম স্ত্রীর মেলামেশা থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে। সব ধরণের খারাবি থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়ে নামাজ-জিকির ও ইবাদত বন্দেগিতে রাত জাগরণ করবে। শেষ রাতে রোজার নিয়তে সাহরির খাবে।
আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকেই সর্বোচ্চ পুরস্কারে ভূষিত করবেন, যারা উল্লেখিত কাজগুলো যথাযথ আদায় করবে। তাই রোজাদার ব্যক্তি ই’তিকাফে অতিবাহিত করে সফলতার শেষ ফল ও ফসল (জাহান্নাম থেকে নাজাত) ঘরে তুলবে।
>> ক্ষমা পাওয়ার পর বান্দা যেন চূড়ান্ত পুরস্কার লাভ করতে পারে সে জন্য এ দশকে আল্লাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত নির্ধারণ করে রেখেছেন। যেই রাত্রির ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। এ রাতকে উপলক্ষ করে আল্লাহ তাআলা সুরা কদর নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল করেছেন।
আল্লাহ বলেন- ‘লাইলাতুল ক্বাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর’ সম্মানিত এ রাতটি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এই রাতে আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র ক্ষমাপ্রার্থী রোজাদারের জন্য দান করেছেন। সুতরাং যে রোজাদার রহমত ও ক্ষমা লাভ করেছে। তার পরিপূর্ণ সমাপ্তি হচ্ছে ই’তিকাফের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর লাভ করে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাতের মাধ্যমে।
লাইলাতুল কদর অন্বেষন
এই রাতটি খোঁজ করতে হবে চলতি (শেষ) দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতে। অর্থাৎ রমজান মাসের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ রামজানের রাতে। কারণ প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর।’
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক রমজানে ২৩, ২৫ ও ২৭ রমজান এই তিন দিন জামাআতের সঙ্গে তারাবিহ আদায় করতেন।
সাহাবায়ে কেরামকে বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে নির্দেশ দিতেন। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ বাস্তবায়নে প্রত্যেক রোজাদার নাজাতের দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করা সুন্নতি কাজ ও ঈমানি দায়িত্ব।
>> প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি একদিন ই’তিকাফ করবে তার মাঝে আর জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব হয়ে যায় (তিবরানি ও বায়হাকি)।
এক ‘খন্দক’ বলতে বুঝায়, ‘আসমান ও জামিনের মধ্যকার দূরত্বের সমানকে।’ এ দূরত্ব যে কত বেশি তা অকল্পনীয়। ইতিকাফের মাধ্যমেই রোজাদার লাইলাতুল কদর অর্জনের মাধ্যমে জাহান্নামের ভয়াবহতা থেকে মুক্ত হয়ে জান্নাত লাভে ধন্য হবে।
লাইলাতুল কদরের চাওয়া পাওয়া
একবার হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি আমি লাইলাতুল ক্বদর পাই তাহলে কোন দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট মাগফেরাত চাইব?
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তখন তুমি বলবে-
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি, ইয়া গাফুরু।’
অর্থ : ‘হে আলাহ! তুমি বড়ই ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাস, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও। তাই আমরাও এ দোয়া বেশি বেশি পড়ে আল্লাহর কাছে আমাদের গুনাহের মাগফিরাত চাইব, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও।’
পরিশেষে…
মাওলার প্রেমের শরাব পানকারী রোজাদার বান্দাদের মধ্য থেকে যারা ই’তিকাফে বসেছেন। বা সামনের দিনগুলোতে বসবনে। তারা একনিষ্ঠ মনে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাবে তারাদের মূল্যবান সময়গুলেঅ।
শেষ দশকের দিনগুলোতে ই’তিকাফে মাসনুনার নিয়তে স্থান করে নেবে মসজিদের নির্জন কোনো স্থানে, যেখানে শুরু হবে তার ই’তিকাফকালীন সময়ের ইবাদত ও সিয়াম-সাধন।
এ ই’তিকাফ ও সিয়াম পালন থেকেই খুঁজে নেবে লাইলাতুল কদর, ক্ষমা, নৈকট্য অর্জন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত তথা চূড়ান্ত মাগফেরাত।
ক্ষমা প্রার্থণায় জীবনের ফেলে আসা সময়ের ছোট-বড় গোনাহ থেকে নাজাত কামনা করবে। সর্বোচ্চ চাওয়ার নিমিত্তে তালাশ করবে লাইলাতুল কদরের। যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। সুতরাং কোনো ই’তিকাফকারী যেন লাইলাতুল কদরের সন্ধানে গাফেল না থাকে।
আল্লাহ তাআলার দরবারে শেষ ফরিয়াদ হোক এমন- ‘হে আল্লাহ দূর করে দাও আমার যিন্দেগীর সব অন্ধকার! ধুয়ে মুছে ছাফ করে দাও আমার জীবনের সব কলংক-কালিমা! হে আল্লাহ তাআলা জীবন সায়াহ্নে মৃত্যুর পূর্বে আমাদেরকে মাফ করে দাও। আমিন।