১৪৩৮ হিজরির রমজান মাস শেষের পথে। অতিবাহিত হচ্ছে রমজানের চূড়ান্ত প্রাপ্তির সময়। রমজানের শেষ সময়ে আল্লাহ তাআলা বান্দার বিগত জীবনের গোনাহ মাফ করে দেন। জাহান্নামের আগুণ থেকে মুক্তি দান করেন।
রমজানের অন্যতম আকর্ষণ লাইলাতুল কদরও নিহিত আছে শেষের বিজোড় দিনগুলোতে। রোজা পালনকারীদের জন্য রমজানের শেষ দিনগুলোর ১০টি গুরুত্বপূর্ণ আমল তুলে ধরা হলো-
বছরের সেরা ১০ রাতের ইবাদত
রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে রাত জেগে ইবাদত করা। রমজানের শেষ দিনগুলোতে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতিটি কাজকেই উদারভাবে দেখেন। বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য প্রত্যেক রাতেই আহ্বান করতে থাকেন।
রমজানের শেষ দিনগুলোতে সময় অপচয় না করে ইবাদাতে মনোযোগী হওয়া। অলসতা ও একঘেয়েমী মানুষকে ইবাদত-বন্দেগিতে বিরত না হওয়া।
>> বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে প্রার্থনা
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করা। যাত তিনি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে শিখিয়েছেন। আর তা হলো-
‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা`ফু আন্না।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাকে ভালো বাসেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
‘লাইলাতুল কদর’ অনুসন্ধান
রমজানের শেষ দিকের বিজোড় রাতে ‘লাইলাতুল কদর’ তালাশ করতে থাকা। যার নির্দেশ দিয়েছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলঅইহি ওয়া সাল্লাম। কারণ লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত করার সমান।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরের রাতে বিশ্বাস ও পুরস্কারের আশায় ইবাদতরত অবস্থায় থাকবে; আল্লাহ তাআলা তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করে দেবেন। (বুখারি)
বিশেষ দোয়াগুলো স্মরণে রাখা
রমজানের শেষ দিনগুলোর বিজোড় রাতে আল্লাহর কাছে ন্যায়ের পথে চলতে এবং অন্যায় পথ থেকে বিরত থাকতে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য তথা নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা।
দিনের বেলায় কিছুক্ষণ ঘুমানো
রমজানের শেষ দিনগুলোতে রাতের ইবাদতের জন্য দিনের বেলায় কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়া আবশ্যক। কেননা রমজানের শেষ দিনগুলো মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগির বিকল্প নেই। তাই রাতের ইবাদাতের জন্য দিনের বেলায় বিশ্রাম গ্রহণ করা।
সামাজিক নেটওয়ার্ক থেকে বিরত থাকা
রমজানের শেষ দিনগুলোতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম তথা ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াকে বর্জন করা জরুরি। অযথা ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ও ইন্টারনেটে অযথা সময় নষ্ট না করে রমজানের কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে মনোযোগী হওয়া।
বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা
কুরআনুল কারিম পড়ার সময় বুঝে বুঝে তিলাওয়াত করা উত্তম। কুরআনের মর্মার্থ অনুধাবনে রয়েছে সবচেয়ে বেশি সাওয়াব। কুরআনের অর্থ না বুঝলেও শুধুমাত্র তেলাওয়াতে রয়েছে অনেক সাওয়াব।
তাই বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা জরুরি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআন তেলাওয়াত সুসংবাদ ও নেয়ামত ঘোষণার আয়াত পাঠ করার সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন। আবার আজাব-গজব ও পরকালের শাস্তির আয়াত পাঠ করার সময় তা থেকে আশ্রয় লাভে প্রার্থনা করতেন।
ধৈর্য্যের সঙ্গে ইবাদত
প্রতি বছর লাইলাতুল কদর এক রাতেই আসে। আর তা রয়েছে রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতে। তাই রমজানের শেষ দিনগুলোকে জীবনের জন্য চূড়ান্ত সময় ভেবে ধৈর্য সহকারে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া। আর এ কথা মনে করে ইবাদত করা যে, এ রমজানের শেষ দিনগুলোই হতে পারে দুনিয়ার জীবনের শেষ দিন।
মুক্ত হস্তে দান করা
রমজানের শেষ দিনগুলোতে গরিব-দুঃখী, সহায়-সম্বলহীন মানুষের মাঝে মুক্ত হস্তে দান করায় রয়েছে অসংখ্য সাওয়াব। নামাজ-রোজা, জিকির-আজকার, কুরআন তেলাওয়াত এবং অন্যান্য ইবাদতের পাশাপাশি গরিব-দুঃখীর মাঝে আল্লাহর ওয়াস্তে দান-খয়রাত করতে কুরআন এবং হাদিসে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ইবাদতে উৎসাহ দেয়া
রমজানের শেষ দিনগুলোতে পরিবার, সমাজ, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশিদেরকে ইবাদত-বন্দেগির প্রতি বিশেষ উৎসহা প্রদান করা। যাতে তারা পরস্পর ইবাদত-বন্দেগিতে প্রতিযোগিতা করে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লাইলাতুল কদর প্রাপ্তিতে ইবাদাত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।