জাতীয় সংসদে দেয়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নির্বাচনমুখী নয় বলে অর্থমন্ত্রী নিজ দলের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন। এই বাজেটকে করের বাজেট, নির্বাচনবিরোধী বাজেট বলে অভিহিত করছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা।
সংসদ সদস্যদের এ ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী তার আগের জায়গা থেকে সরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু সংসদ সদস্যরা নন, প্রস্তাবিত বাজেটে আবগারি শুল্ক, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ঘোষণা, নতুন করে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোসহ অর্থমন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষেরও রোষানলে পড়ে সরকার। বাজেট পেশের পর থেকেই অনেকে সরকারের ওপর বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রস্তাব, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর ঘোষণা এবং বিভিন্ন সময়ে দেয়া ‘বিতর্কিত’বক্তব্যের জন্য সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার ইতোমধ্যে তার অবস্থান থেকে সরে এসে ভ্যাটের হার কমানো, ভ্যাটমুক্ত পণ্য ও সেবার তালিকা বাড়ানো, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবাখাতকে ভ্যাটের আওতামুক্ত করা, খাতভিত্তিক ভ্যাটের হার কমানো, নতুন আইনে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় যেসব সেবার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে সেগুলোর ওপর এ হার কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।
সংসদ সদস্য ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি বললেন, ‘এক লাখ টাকা যার আছে সে সম্পদশালী। চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকা না হলে এক লাখ টাকা, টাকা হয়ে গেল?’ তিনি আরো বলেন, আপনি অর্থমন্ত্রী, আপনার কাজ বাজেট পেশ করা। এই সংসদের ৩৫০ জন জনগণের প্রতিনিধি ঠিক করবেন জনগণের কল্যাণে কোনটা থাকবে আর কোনটা থাকবে না। একগুঁয়েমি সিস্টেম বন্ধ করেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বাজেট নিয়ে সারাদেশে আলোচনার ঝড় চলছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা নির্বাচনী বাজেট নয়। তাহলে অর্থমন্ত্রী কবে নির্বাচনী বাজেট দেবেন? আগামী বাজেট কার্যকর হবে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। তখন বর্ষা শুরু হবে। সেপ্টেম্বরে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় গেলে, অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল। এবারই নির্বাচনমুখী বাজেট করা উচিত ছিল। বলা যায়, অর্থমন্ত্রী এবার নির্বাচনবিরোধী বাজেট করেছেন। অর্থমন্ত্রী কী কারণে কার স্বার্থে ব্যাংক হিসেবে আবগারি শুল্ক করেছেন জানা নেই।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, সামনে নির্বাচন আসছে। অর্থমন্ত্রী তার আগে জনগণকে বিভ্রান্ত করে দিলেন। আগামী নির্বাচনে আল্লাহ তাকে (অর্থমন্ত্রী) সুযোগ দেবে কিনা জানি না। কিন্তু যাদের আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবে তারা যাতে নির্বাচন করতে পারে সেটা খেয়াল করতে হবে। তিনি বলেন, এটা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। সুদ এমনিতেই কম। সঞ্চয়পত্রে সুদের হার যাতে না কমানো হয়। ১০ শতাংশ বাড়ালে খরচ হবে এক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু উপকার পাবে লাখ লাখ মানুষ। এটা সিনিয়র সিটিজেনরা পান। তারা কোথাও হাত পাততে পারেন না।
এছাড়া জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন জাতীয় সংসদে। একই সঙ্গে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনার দাবি জানান তিনি। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট ২০১৭ সালে জনগণের জন্য শ্রেষ্ঠ তামাশা। অর্থমন্ত্রী আপনার কাছে মাফ চাই, ক্ষমা চাই। আপনার কাছে আর আমরা বাজেট চাই না।