উপাচার্য ছাড়াই চলছে দেশের ৩৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ৬৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো উপ-উপাচার্য। ৪৬টিতে কোষাধ্যক্ষ পদ শূন্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এসব পদে নিয়োগ দিতে বারবার তাগাদা দিলেও তা আমলে নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নিয়ম না মানা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা করে ভর্তি বাতিলসহ প্রদত্ত সার্টিফিকেট অবৈধ ঘোষণা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইউজিসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে অনুমোদিত ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম সারির বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়নি। আইন অনুযায়ী তিন মাসের বেশি এসব পদ শূন্য থাকলে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত করার কথা। কিন্তু বছরের পর বছর শূন্য পদেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে প্রশাসনিক ও একাডেমিকসহ সকল কার্যক্রম।
ইউজিসি সম্প্রতি উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই- এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশ করেছে। এছাড়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব ও মামলা চলমান থাকায় একটি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় একটি এবং অনুমোদনের পর এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি- এমন পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে ইউজিসি।
সম্প্রতি ইউজিসির জারি করা এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যারা এখন পর্যন্ত উপাচার্য নিয়োগে নামের তালিকা পাঠায়নি তাদের সনদ অবৈধ বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভর্তি কার্যক্রম রহিত করা হবে বলেও জানান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির মূল সনদ উপাচার্য ও পরীক্ষানিয়ন্ত্রক কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি চার বছর মেয়াদে প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেবেন। ফলে এসব পদে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে নিয়োগ দেয়া আইনের পরিপন্থী। রাষ্ট্রপতির নিয়োগ করা উপাচার্যের স্বাক্ষর ছাড়া সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হবে না।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, বৈধ্য উপাচার্য নিয়োগ ছাড়া কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সনদ বৈধ হতে পারে না। রাষ্ট্রপতির নিয়োগ ছাড়া কোনো উপাচার্য যদি সনদে স্বাক্ষর করেন তা অবৈধ হবে। তবে পরীক্ষানিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরে পাওয়া অস্থায়ী সনদ বৈধ হবে। এ সনদ দিয়ে যেকোনো কাজ করা যাবে। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগ পাবার পর তার স্বাক্ষরে স্থায়ী সনদ নিতে হবে শিক্ষার্থীদের।
ইউজিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমরা বারবার সর্তক করার পরও অনেকে উপাচার্য নিয়োগে তিনজনের নামের সুপারিশ করেছে। সেগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনিত হওয়ার পর উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে।
তিনি বলেন, এখনও যারা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের উদ্যোগ নেয়নি তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া বন্ধসহ প্রদত্ত সার্টিফিকেট অবৈধ ঘোষণা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হবে।
বৈধ ভিসি নেই যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে
আইনানুগ ও নিয়মিত উপাচার্য না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, আন্তর্জাতিক ইসলামী ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, দি পিপল’স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইবাইস ইউনিভার্সিটি (বোর্ড অব ট্রাস্টিজ দ্বন্দ্ব, মামলা চলমান), গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, অতীশ দীপঙ্ককর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ফেনী ইউনিভার্সিটি, নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সৈয়দপুর, আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, কাদিরাবাদ, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এন পি আই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, চট্টগ্রাম ও ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ।
উপাচার্য নিয়োগ না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা তালিকা পাঠিয়েছি। নিয়োগ দেয়ার কাজ রাষ্ট্রপতির। তবে যাদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে তাদের নিয়ে বির্তক রয়েছে বলে ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে।
উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, আন্তর্জাতিক ইসলামী ইউনিভার্সিটি, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি (বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং মামলা চলছে), সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি (বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে দ্বন্দ্ব, অনুমোদিত কোনো ঠিকানা নেই), গ্রীন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, সৈয়দপুর, আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, কাদিরাবাদ, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, কুমিল্লা, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এন পি আই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, চট্টগ্রাম ও ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ।
কুইন্স ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়াম ইউনিভার্সিটি ও ইবাইস ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টিজ বোর্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। কুইন্স ইউনিভার্সিটির শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন বাতিল এবং রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, কেরানীগঞ্জ, রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্য্যালয়, আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষা কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।
উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ না দেয়ার বিষয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মো. সাহা আলম বলেন, পদ দুটিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।