লন্ডনের সেভেন সিস্টারস রোডের ফিনসবুরি পার্ক মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদ। সোমবার রাতে ওই মসজিদের মুসল্লিদের ওপর নেমে এসেছিল এক হামলাকারীর বিভিষীকাময় কাভার্ড ভ্যান তাণ্ডব। মুসল্লিরা হামলাকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে হাতে-নাতে ধরে ফেলেন।
এসময় উত্তেজিত জনতার হাত থেকে হামলাকারীকে প্রাণে বাঁচান ওই ইমাম। ব্রিটিশ গণমাধ্যম জুড়ে গাওয়া হচ্ছে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদের বীরত্বপূর্ণ এ কাজের গুণকীর্তন। দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে মাহমুদকে ‘হিরো অব দ্য ডে’- ‘দিনের নায়ক’ হিসেবে উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১২টা ২০মিনিটের দিকে সেভেন সিস্টারস রোডের ফিনসবুরি পার্ক মসজিদে তারাবি নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে মুসল্লিদের ওপর অতর্কিত কাভার্ড ভ্যান চালিয়ে দেয় ৪৮ বছর বয়সী হামলাকারী। এতে এক বাংলাদেশি প্রবীণ প্রবাসী নিহত ও আরো অন্তত ১০জন আহত হয়েছেন। সেই সময় মসজিদের মুসল্লিরা রাস্তা ধরে বাসার দিকে ফিরতে থাকায় হামলাকারী পালিয়ে যেতে পারেননি।
হামলার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে যান ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদ। তিনি দেখেন, হামলাকারী মাটিতে পড়ে গেছেন। স্থানীয় জনতা হামলাকারীকে ঘিরে ফেলে। মাহমুদ বলেন, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলি। এসময় অনেকে তাকে পিটিয়ে হত্যার আহ্বান জানান। কিন্তু এতে বাধা দেন তিনি। এমনকি হামলাকারীর যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয় সেজন্য উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেন তিনি।
সোমবার সকালে উত্তর লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইমাম মোহাম্মদ মাহমুদ। তিনি বলেন, চারদিক থেকে হামলাকারীর ওপর আঘাত আসতে থাকে। তার ওপর সব ধরনের আক্রমণ ঠেকাতে আমরা সামর্থ্য হয়েছিলাম।
মাহমুদ বলেন, পুলিশ ভ্যান না আসা পর্যন্ত তিনি এবং অন্যরা মিলে হামলাকারীকে সুরক্ষা দেন। আমরা পুলিশকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেছি। তাদেরকে (পুলিশকে) বলেছি, উত্তেজিত জনতা হামলাকারীকে আঘাত করার চেষ্টা করছেন। আপনারা যদি কোনো ব্যবস্থা না নেন, তাহলে হয়তো তার (হামলাকারীর) মারাত্মক ক্ষতি হবে।
‘সুতরাং আমরা লোকজনকে ধাক্কা মেরে ফিরিয়ে দিয়েছি; যাতে পুলিশি জিম্মায় না নেয়া পর্যন্ত উত্তেজিত জনতা হামলাকারীকে আঘাত করতে না পারেন। এবং তাকে পুলিশের ভ্যানের পেছনে ঢুকিয়ে দিয়েছি। এটাই সব; যা আমরা করেছি। এটা শুধুমাত্র আমি একাই করিনি; সেখানে আমাদের একদল ভাই ছিল।’ -বলেন ইমাম মাহমুদ।
তিনি বলেন, তারা শান্ত ছিলেন এবং লোকজনকে শান্ত করতে সক্ষম হন। ইমাম ও স্থানীয় মুসল্লিদের চেষ্টায় উত্তেজিত জনতা হাত থেকে রেহাই পান হামলাকারী। ইমাম মোহাম্মদ বলেন, শেষ পর্যন্ত খুনের দায়ে আটককৃত হামলাকারীর গায়ে কোনো আচড় লাগেনি।
তবে এই কৃতিত্ব শুধু একার নয় বলে মন্তব্য করেছেন ইমাম মাহমুদ। ফিনসবুরি পার্কের বাসিন্দাদেরও প্রশংসা করেছেন তিনি। বলেন, আমাদের মসজিদ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ…আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি, আমরা যেকোনো ধরনের উত্তেজনা কমিয়ে আনতে সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারি।
এর আগে ফিনসবুরি পার্কের আরো তিন ব্যক্তি মসজিদের হামলাকারীকে রক্ষায় ইমামের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তারা বলেন, ঘটনার পরপরই মসজিদ থেকে ইমাম বেরিয়ে আসেন এবং বলেন, শুনুন আমরা রোযা রেখেছি। এটা রমজান মাস। সুতরাং আমরা এ ধরনের কাজ করতে পারি না। দয়া করে সবাই শান্ত হোন।
স্থানীয় এক ক্যাফের মালিক ২৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ বলেন, এ কারণেই এখন পর্যন্ত ওই হামলাকারী বেঁচে আছেন। ‘এটাই একমাত্র কারণ। ইমাম যদি সেখানে উপস্থিত না হতেন, হামলাকারী আজ বেঁচে থাকতো না।
রাতে মুসল্লিদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেয়ার সময় হামলাকারী চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘আমি সব মুসলিমকে হত্যা করবো।’ কিন্তু সেই মুসলিমরাই উত্তেজিত জনতার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন হামলাকারীকে।