ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের কেন যেন এবার একটু আলোচনা কমই। কেন যেন জৌলুস নেই। একটাই কারণ সম্ভবত, গত টানা তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের অনুপস্থিতি। বর্তমান বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন, স্বাগতিক দেশ এবং ৬ মহাদেশের ৬ চ্যাম্পিয়নকে নিয়েই আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক এক বছর আগের এই টুর্নামেন্ট।
টুর্নামেন্টটা যতটা না লড়াইয়ের, ততটা আয়োজকদের সক্ষমতা যাচাইয়ের। কারণ, একই দেশেই এক বছর পর অনুষ্ঠিত হবে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের। স্বাগতিক এবং গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ইউরোপের বিধায় এবার কনফেডারেশন্স কাপের তিনটি দলই এলো উয়েফা থেকে।
গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। স্বাগতিক রাশিয়া এবং ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল। সঙ্গে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলি, আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্স জয়ী ক্যামেরুন, এশিয়ান অঞ্চল এএফসি চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, ওশেনিয়ান অঞ্চল ওএফসি চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড, কনকাকাফ অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন মেক্সিকো খেলছে এবারের কনফেডারেশন্স কাপে।
আজই কিক অফের বাঁশি বাজছে ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের। একই সঙ্গে কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেলো আগামী বিশ্বকাপের। ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার মত দল না থাকার কারণে, এবারের কনফেডারেশন্স কাপটি স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে।
তবুও, এই এইকট টুর্নামেন্ট দু’হাতভরে দিতে পারে চারবারের বিশ্বসেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে। একটা মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট তো তিনি তার দেশকে প্রথমবারেরমত উপহার দিতে পেরেছেন। জিতেছেন গত ইউরো। এবার তার সামনে হাতছানি দিচ্ছে একটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট জেতার। ফিফা কনফেডারেশন্স কাপকে যে অনেকেই ‘মিনি বিশ্বকাপ’ বলেও অভিহিত করে থাকেন!
কনফেডারেশন্স কাপের জন্য অভিনব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ক্রিশ্চিয়ানো। মাথার চুলে দিয়েছেন নতুন হেয়ারকাট। পায়ের বুটজোড়া স্পেশাল অর্ডার দিয়ে ডিজাইন করিয়ে নিয়েছেন। শিরোপা জেতার জন্যই এসব প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা।
প্রতিটি টুর্নামেন্টেরই কিছু তারকা খেলোয়াড়ের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন একজন পোস্টার বয়ের। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো তাহলে এবার ফিফা কনফেডারেশন্স কাপের পোস্টার বয়! চিলির আলেক্সিজ সানচেজও হয়তো এই টুর্নামেন্টের আলো কেড়ে নেবেন কিংবা জার্মানির কেউ। তবে, সবাই যে রোনালদোর ছায়ায় ঢাকা পড়ছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এখন শুধু মাঠেই প্রমাণ করার পালা।
গত বছর ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ফ্রান্সের মত দলকে হারিয়ে প্রথমবারেরমত পর্তুগালকে শিরোপা উপহার দিয়েছেন রোনালদো এবং তার সতীর্থরা। সবচেয়ে বড় কথা রোনালদোর প্রভাবেই তার সতীর্থরা যেন জ্বলে উঠেছিল। কারণ, ফাইনাল শুরুর পরপরই ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল রোনালদোকে। এরপরও তার সতীর্থরা ফ্রান্সের কাছ থেকে ইউরোর মুকুট ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। আর এতে রোনালদোর ভুমিকা যে শতভাগ ছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিশ্বকাপ ছাড়া কনফেডারেশন্স কাপে এই প্রথম খেলার সুযোগ পেয়েছে পর্তুগাল। একই সঙ্গে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও। প্রাপ্ত এই সুযোগ হেলায় হারাতে চান না রোনালদো। যদিও কাজটা বেশ কঠিন হবে। কারণ, এখানে খেলছে প্রতিটি মহাদেশের চ্যাম্পিয়ন, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি এবং স্বাগতিক রাশিয়া। তবুও নিজের মাথায় আরেকটি মুকুট পরতে চান রোনালদো।
ফিফা ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রোনালদো বলেছিলেন, ‘এই প্রথম পর্তুগাল ফিফা কনফেডারেশন্স কাপে প্রতিযোগিতা করতে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য দারুণ এক সুযোগ। আশা করি খুব সুন্দর একটি টুর্নামেন্ট হবে এবং আমাদের প্রোফাইলকে আরও সমৃদ্ধ করবে এই টুর্নামেন্ট।’
জয়ের স্বপ্ন তো অবশ্যই দেখছেন রোনালদো অ্যান্ড কোং। তিনি বলেন, ‘জয়ের স্বপ্ন তো অবশ্যই দেখি। তবে আমরা এটাও জানি, শিরোপা জয় কতটা কঠিন হবে। কারণ, এই টুর্নামেন্টে অনেকগুলো কঠিন প্রতিপক্ষ রয়েছে। তবে ফুটবলে সব কিছুই সম্ভব।’
‘এ’ গ্রুপে রয়েছে রোনালদোর পর্তুগাল। বাকি তিন প্রতিপক্ষ স্বাগতিক রাশিয়া, ওশেনিয়া অঞ্চল থেকে আসা নিউজিল্যান্ড এবং কনকাকাফের মেক্সিকো। গ্রুপে নিঃসন্দেহে পর্তুগালই ফেবারিট। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতার মুখোমুখি হবে মেক্সিকোর এবং এই মেক্সিকোর বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে, আগামীকাল মাঠে নামছে পর্তুগাল। কাজানের কাজান এরেনায় বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় মাঠে নামবে রোনালদোরা।