দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হবে না বুঝতে পেরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেখানে গিয়ে আমাদের বলেছেন, বিএনপিকে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। খুব আনন্দের কথা। আপনি মুখ থেকে আমাদের অংশগ্রহণের কথা বলা –এটা আগে কখনও শুনেনি, শুনালম। এতে কিছুটা আনন্দিত হয়েছি এজন্যে যে, তাহলে আপনি বুঝতে পেরেছেন বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে না।’
সুইডেন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় এক ইফতারপূর্ব আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বয়কটের বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সেখানে (সুইডেন) গিয়ে যখন তিনি (প্রধানমন্ত্রী) গণতন্ত্রের কথা বলেন, সেখানে গিয়ে যখন তিনি লেসন দিতে চান, সবক দিতে চান, তখন নিঃসন্দেহে আমরা শুধু আপত্তিই করবো না, প্রতিবাদও করবো। সেখানে আপনি যে কথাটা বলেছেন, আমরা (বিএনপি) যেন ভুল না করি নির্বাচনে যাই।`
`আমরা তো নির্বাচনে যেতে চেয়েছি। আপনারা চাতুরি করে, প্রতারণা করে, জনগণকে বিভ্রান্ত করে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনী করলেন। অর্থাৎ কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়ে আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আনলেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, `তখন আমরা যে আন্দোলন করেছি, সেই আন্দোলনে আমরা একা ছিলাম না, দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল ছিল, দেশের মানুষ ছিল এবং সেই কারণে সেদিন জাতীয় পার্টির একটা
অংশ ছাড়া আপনারা কাউকে সঙ্গে পাননি।`
বর্তমানেও ‘একই অবস্থা বিরাজ’ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, `আমরা এখনও দেখতে পারছি, এই সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করতে চাচ্ছেন, একতরফা নির্বাচনই করতে চাচ্ছেন।`
`আমরা বলতে চাই, এবার একতরফা নির্বাচন হবে না। অবশ্যই নির্বাচনের সময়ে আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) এমন একটা সরকার নিয়ে আসতে হবে, যে সরকার নিরপেক্ষভাবে একটা নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করবে। সেজন্য আমরা সহায়ক সরকারের কথা
বলেছি,` যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বলেছি, নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। দলীয় সরকার থাকলে কখনই সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। কিছুদিন পরে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। আমরা বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগের যদি শুভ বুদ্ধির উদয় হয়ে থাকে, তাহলে সেটা মেনে নিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা ইনক্লুসিভ ইলেকশন, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, সবার অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন করবেন, দেশকে এই রাজনৈতিক সংকট থেকে মুক্ত করতে।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এমনভাবে দলীয়করণ করছে যে ওইসব সংস্থার প্রধানরা এমনভাবে কথা বলেন যা আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা সেভাবে কথা বলে না। যেটা আমরা আগে কখনও দেখিনি।
`আজকে কয়েকবছরে বিরোধী দলের কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছেন। ৫শ`র বেশি আমাদের নেতা-কর্মীকে গুম করে দিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু করেছেন। আজকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী নেতাদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ এমন কোনো নেতা-কর্মী নেই, যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই।`
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন ভয় পেয়ে গেছে নির্বাচন যদি হয় তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তারা সকল জরিপে দেখেছে যে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৩০টা থেকে ৪০টার বেশি আসন পাবে না। সেই কারণে আমরা বলছি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে এবং সবার কাছে তা গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
রাজধানীর বিজয়নগরে হোটেল ৭১ এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ন্যাশনাললিস্ট এক্স স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (রুনেসা) উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মল্লিক মো. মোকাম্মেল কবীরের পরিচালনায় সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান তপন, শাহীন শওকত, মতিউর রহমান মন্টু, আমিনুল ইসলাম, রমেশ দত্ত, জাহাঙ্গীর হোসেন জাহাঙ্গীর, জিয়াউল ইসলাম জিয়া, রোজিনা আখতার ডলি, মিশতাক আহমেদ রাকী, মঞ্জুর কাদের বাবু, ফরহাদ হোসেন নিয়ন, ইউসুফ মোল্লা, মোস্তাফিজুর রহমান মুনির, ওয়াসিমুল বারী বাবুল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।