বল হাতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সামনে প্রতিরোধই গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ২৬৫ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয়ার পর অন্তত বোলারদের কাছ থেকে কিছুটা লড়াই আশা করেছিল বাংলাদেশের সমর্থকরা। সে লড়াইটা মোস্তাফিজ, রুবেল, তাসকিন কিংবা সাকিবরা মোটেও করতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশকে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে গেল ভারত।
বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেয়া ২৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরি, বিরাট কোহলি এবং শিখর ধাওয়ানের হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৫৯ বল হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। ১৮ জুন, লন্ডনের কেনিংটন ওভালে ফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বিরাট কোহলির ভারত।
ম্যাচ মাঠে গড়ানোর আগে যে যুদ্ধ যুদ্ধ আবহ তৈরি হয়েছিল, মাঠে গড়ানোর পর সেটা আর খুব বেশি থাকেনি। মূলতঃ মাশরাফির টস হারের মধ্য দিয়েই অর্ধেক হেরে গেলো যেন বাংলাদেশ। কারণ, ওই সময়ই মাশরাফি বলেছিলেন, টস জিতলে তিনিও ফিল্ডিং নিতেন।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সৌম্য সরকার হতাশা উপহার দিলেন। শূন্য রানে আউট হয়ে গেলেন কিছু বুঝে ওঠার আগেই। সাব্বির রহমান ভালো খেলতে খেলতে অধৈয্য হয়ে উইকেট বিলিয়ে দিলেন। এরপর তামিম আর মুশফিক দারুণ খেলছিলেন। ১২৩ রানের বড় জুটি গড়ে বাংলাদেশের স্কোরকে বড় সংগ্রহের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু ১২৩ রানের জুটি গড়ার পর আবারও ছন্দপতন। ভারতীয় বোলারদের কৌশলী বোলিংয়ের কাছেই মূলতঃ তামিম আর মুশফিক উইকেট বিলিয়ে দিতে বাধ্য হন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠা সাকিব আর মাহমুদউল্লাহও হতাশ করলেন। মোসাদ্দেকের কাছ থেকে আশানুরূপ ব্যাটিং দেখা যায়নি।
শেষ দিকে ২৫ বলে মাশরাফি ৩০ রান না করলে বাংলাদেশের রান আড়াই শ’ পার হতো কি না সন্দেহ। শেষ পর্যন্ত রান গিয়ে ঠেকলো ২৪৬-তে।
এটাও লড়াকু স্কোর হয়ে যেতো, যদি বোলাররা ভালো করতেন। মোস্তাফিজের বোলিং আর তার বলে ভারতীয়দের ব্যাটিং দেখেই মনে হলো আইপিএলে খেলা কতাটা কাল হলো এই বিস্ময় পেসারের জন্য। শ্রীলঙ্কার অজন্তা মেন্ডিসকে যেমন আইপিএল নষ্ট করে দিয়েছে, ঠিক তেমনি মোস্তাফিজকেও নষ্ট করে দিল কি না তা এখনই গবেষণার সময় এসে গেছে। মোস্তাফিজের আর কোনো অস্ত্রই আর কাজে দিল না। বরং, তার প্রতিটি বলকেই শাসন করেছে ভারতের ব্যাটসম্যানরা। ৬ ওভার বল করে ৫৩ রান দিয়েছেন ৮.৮৩ ইকনোমি রেটে। সাফল্য বলতে তো নেই’ই।
একমাত্র সাফল্য মাশরাফি বিন মর্তুজার। দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান আর রোহিত শর্মা ৮৭ রানের জুটি গড়ার পর তাতে ভাঙন ধরান মাশরাফিই। ১৫তম ওভারে মাশরাফির বলে মিড উইকেটে খেলতে গিয়ে সোজা পয়েন্টে মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ দেন ধাওয়ান। ৩৪ বলে ৪৬ রান করে বিদায় নেন ধাওয়ান। ৭টি বাউন্ডারির সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন তিনি।
এই একটি উইকেটেরই পতন ঘটাতে পারলো বাংলাদেশের বোলাররা। মোস্তাফিজের বলে তো ধার ছিলই না। রুবেল, তাসকিনের বলেও কোনো ধার ছিল না। সাকিব আবারও হতাশা উপহার দিলেন বল হাতে। মোসাদ্দেক, মাহমুদউল্লাহ কিংবা সাব্বির রহমানদের ব্যবহার করেও কোনো সাফল্য আদায় করতে পারেননি মাশরাফি।
বরং, উল্টো ১৭৮ রানের বিশাল এবং অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে তোলেন রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি। রোহিত তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ১২৯ বলে ১২৩ রানে। ১৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে একটি ছক্কা মারেন তিনি।
আফসোস কোহলির জন্য। মাত্র ৪ রানের অভাবে ২৮তম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা পূরণ হলো না তার। ৭৮ বলে তিনি অপরাজিত ছিলেন ৯৬ রানে। বাউন্ডারি মারেন ১৩টি। কোনো ছক্কার মার নেই।