রাজধানীর জোয়ার সাহারা, বাড্ডা, খিলক্ষেতসহ অন্যান্য মৌজার অধিগ্রহণকৃত প্রায় এক হাজার ৩৮৫ একর জমি অবমুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ।
আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন তিনি।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে ভূমিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অধিগ্রহণ করা জমির এলএ কেস নম্বর-১৩৮/৬১-৬২, ৯১/৫৭-৫৮ ও ২৩/৬৬-৬৬ (সম্পত্তি অবমুক্তি)।
বৈঠক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটি ১৯৬১ সালের ২১ অক্টোবর এক সভায় বৃহত্তর ঢাকায় আবাসনের জন্য ভোলা, মহাখালী, করাইল, লালা সরাইল, উলুন, ভাটারা, বাড্ডা, সামাইর, জোয়ার সাহারা ও সূতিভোলা মৌজায় ২৭৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদন করে।
এর মধ্যে ১৫১৮.২৮ একর জমির মধ্যে স্থানীয় লোকজন ঘরবাড়ি করে ঘনবসতি এলাকা হিসেবে বসবাস করে আসছে।
এ সমস্যার সমাধানের জন্য ১৩৮নং এলএ কেসের অধিগৃহীত ১৫১৮.২৮ একর জমি থেকে ১৩৮৫.২৮ একর জমি পুরাতন মালিকদের কাছে প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে ১৯৯৩ সালের ৭ জানুয়ারি ৯৬১.২৪ একর জমি অবমুক্তির জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে রহস্যজনক কারণে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিটি চূড়ান্ত অর্থাৎ গেজেট নোটিফিকেশন আকারে প্রকাশ করা হয়নি।
এ কারণে রামপুরা থেকে খিলক্ষেত প্রধান সড়কের দু’পাশের উলন, বাড্ডা, ভাটারা, জোয়ার সাহারা, ভোলা, সূতিভোলা মৌজার লাখো মানুষ সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আর এ সুযোগে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।
এছাড়া বৈঠকে ২০১৩ সালে ঢাকা জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুমদখল কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওসব মৌজার জমির খাজনা, নামজারি বন্ধ রাখার ব্যাপারে ইস্যু করা চিঠিটি উদ্দেশ্যমূলক বলে তীব্র সমালোচনা করা হয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উপস্থিতিতে মালিকানা নিশ্চিত না করে বহুতল ভবনের অনুমোদন দেয়ার প্রক্রিয়ার কঠোর সমালোচনাও করা হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এসব জমির অবমুক্তকরণ সংক্রান্ত সাবেক দুই রাষ্ট্রপতির অর্ডার, ভূমি মালিকদের অধিগ্রহণের টাকা ফেরতসহ আইন-কানুন নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা করা হবে।
ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বলেন, ১৯৬১ সালে এসব জমি অধিগ্রহণ করা হয়। তবে তা আলোচনায় আসে ২০১৫ সালে বর্তমান মহাজোট সরকার গঠনের এক বছরের মাথায়। তখন বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়। কিন্তু তার চূড়ান্ত সমাধান সেই সময় হয়নি।
‘নানা রকম যাচাই-বাছাই ও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আজ আমরা ঐতিহাসিক একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি।’
এ সময় রাজউক, ঢাকার ডিসি অফিসের প্রতিনিধি, ভূমি অফিসের অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের তুমুল সমালোচনা করেন মন্ত্রী।
সভায় ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ভূমি সচিব ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আকরাম হোসেন, রাজউক চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।