ভবনের ১০ তলা থেকে লাফিয়ে পড়া এক মেয়ে শিশুকে মাটিতে পড়ার আগেই ধরে ফেললেন এক ব্যক্তি। ঘটনাটি ঘটেছে লন্ডনের পশ্চিমাঞ্চলীয় লাটিমের রোডে গ্রেনফেল টাওয়ারের নিচে। ২৪ তলা ভবনটিতে আগুন লাগার পর চারিদিকে ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। এসময় নিচে নামতে না পেয়ে মেয়েটির মা তাকে বাঁচানোর জন্য জানালা লাফ দিতে বলেন। প্রাণ বাঁচাতে ওই শিশু মায়ের সহায়তা লাফিয়ে পড়ে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া অর্ধশতাধিক মানুষকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী সামিরা লামরানি বলেন, ভবনটির ৯ অথবা ১০ তলায় আটকে পড়া এক নারী নিজের মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। তিনি মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা জনগণের ওপর ভরসা করে মেয়েকে জানালা দিয়ে ফেলে দেন।
ওই প্রত্যক্ষদর্শী আরো বলেন, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে এক নারী তার বাচ্চাকে নিচে ফেলে দেয়ার ইঙ্গিত দেন। এরপর লোকজন জানালার নিচে মাটিতে জড়ো হয়ে ওই নারীকে তার বাচ্চা নিচে ফেলে দেয়ার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে বাচ্চাকে নিচে ফেলে দেন ওই নারী। মাটিতে পড়তে না দিয়ে বাচ্চাকে ধরে ফেলেন উপস্থিত এক ব্যক্তি।
তিনি আরও বলেন, ভবনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসিন্দারা সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছিলেন। ভবনের বাসিন্দাদের শান্ত থাকতে বলা হয়েছিল। বাইরে থেকে সর্বোচ্চ আশ্বাস দেয়া হয়। একটা ফোন নম্বরও দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভবনের ভেতরের মানুষের এতক্ষণ বেঁচে থাকার কথা নয়।
সামিরা বলেন, আমার মেয়ের বন্ধু জানিয়েছে, তিনি একজনকে দেখেছেন; যিনি জানালা দিয়ে নিচে লাফ দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। প্রত্যেক ফ্লোরে এরকম অনেককে দেখা গেছে। এ সংখ্যা কম নয়। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। তাদের অার্তনাদ আমরা ভুলতে পারব না। সামিরা আরও বলেন, আমি তাদের বেঁচে থাকার আর্তনাদ শুনেছি।
জারা নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, পাঁচ কিংবা ছয় তলা থেকে আরেক নারী আগুন থেকে বাঁচাতে তার বাচ্চাকে নিচে ফেলে দিয়েছেন। ওই বাচ্চার বয়স পাঁচ বছরের বেশি হবে না। বাচ্চা বেঁচে থাকলেও ওই নারী হয়তো আগুনে পুড়ে গেছেন।
তিনি আরো বলেন, আমি ফোন রেখে এসেছিলাম। পরে আবার ফিরে গিয়ে ফোন নিয়ে আসি। আসার সময় দেখি রাস্তা পুরোটাই বন্ধ হয়ে গেছে। নাটকীয়ভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে অনেকটাই হলিউডের চলচ্চিত্রের মতো দৃশ্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি। জারা বলেন, এক নারী চিৎকার করে বলছিলেন ‘অামার বাচ্চা, আমার বাচ্চা, আমি বের হতে চাই। আমার ছেলেকে বাঁচাতে চাই।’ কিন্তু তার জন্য আমরা কিছুই করতে পারছিলাম না। আমরা শুধু দৃশ্যটা দেখছিলাম। কারণ, আমাদের করার মতো কোনো উপায় ছিল না।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত সোয়া ১টার দিকে গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুনের সূত্রপাত হলেও এখনো পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। যেকোনো মুহূর্তে আটকে পড়া মানুষসহ ভবনটি ধসে পড়তে পারে।
সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ।