প্রবল বর্ষণের কারণে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ধসের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার (১৩ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানান, পাহাড়ধসের ঘটনায় ৪ সেনা সদস্যসহ মোট ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। আরও দু’জন সেনা সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা শতাধিক ছড়িয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়।
দৈনিক প্রথম আলো’র অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত সংবাদের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, পাহাড়ধসের ঘটনায় চার সেনা সদস্যসহ মোট ১১৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ২১ জন ও চন্দনাইশে ৩ জন, রাঙামাটিতে চার সেনা সদস্যসহ ৮৯ জন এবং বান্দরবানে চারজন নিহত হয়েছেন।
বিডিনিউজ’র খবরে বলা হয়েছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব জি এম আব্দুল কাদের মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই সেনা কর্মকর্তাসহ ১২৪ জনের লাশ উদ্ধারের খবর তারা পেয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটিতে ৮৮ জন, চট্টগ্রামে ৩০ জন এবং বান্দরবানে ছয়জনের লাশ উদ্ধারের তথ্য এসেছে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে।
ওই সময় পর্যন্ত স্থানীয় কর্মকর্তারা রাঙামাটিতে ৮৮ জন, চট্টগ্রামে ৩০ জন এবং বান্দরবানে সাতজন নিহতের খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অতি বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙামাটি, বান্দরবান এবং চট্টগ্রামে ১০৭ জন নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে।এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে রাঙামাটিতে। সেখানে ৭৫ জন নিহত হবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার। নিহতদের মধ্যে মহিলা ও শিশু রয়েছে।এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে সেনাবাহিনীর চার জন সদস্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির পুলিশ সুপার। তারা মানিকছড়ি ক্যাম্পে কর্মরত ছিলেন।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলাট্রিবিউন’র সংবাদে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১৩০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তাসহ ৯৮ জন, বান্দরবানে ৭ জন এবং চট্টগ্রামে ২৫ জন মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এখনও মাটির নিচে অনেকে চাপা পড়ে আছেন। সোমবার মধ্য রাতে থেকে আজ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে-গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ৮০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তাসহ ৪৭ জন, বান্দরবানে ৬ জন এবং চট্টগ্রামে ২৭ জন মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এখনও মাটির নিচে অনেকের লাশ চাপা পড়ে আছে।
এদিকে, আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ৪ সেনা সদস্য নিহত হওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় মঙ্গলবার (১৩-৬-২০১৭) ২ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৪ জন সেনাসদস্য নিহত হয়। ভোরে রাঙ্গামাটির মানিকছড়িতে একটি পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে রাঙ্গামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল উক্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন আনুমানিক সকাল ১১টায় উদ্ধার কার্যস্থল সংলগ্ন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারীদলের উপর ধসে পড়লে তারা মূল সড়ক হতে ৩০ ফিট নিচে পড়ে যান। পরবর্তীতে একই ক্যাম্প থেকে আরও একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ২ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৪ জন সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।
নিহতরা হলেন- মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক (জন্মঃ ১৬ মার্চ ১৯৮১; বাড়ী- সিংড়াইল, মানিকগঞ্জ; তিনি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ৪৪ বিএমএ লং কোর্সের সাথে কমিশন প্রাপ্ত হন; তিনি বিবাহিত এবং পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলের জনক), ক্যাপ্টেন মোঃ তানভীর সালাম শান্ত (জন্মঃ ৩০ মার্চ ১৯৯০; বাড়ী-বাউফল, পটুয়াখালী; তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ৬৪ বিএমএ লং কোর্সের সাথে কমিশন প্রাপ্ত হন; তিনি সদ্য বিবাহিত), কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক (জন্মঃ ০১ মে ১৯৭৬; বাড়ী-ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ; তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যোগদান করেন; তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক) ও সৈনিক মোঃ শাহিন আলম (জন্মঃ ০১ আগস্ট ১৯৮৮; বাড়ী-আদমদিঘী, বগুড়া; তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন; তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলের জনক)।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাত ও মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড়ধসের ঘটনায় এ প্রাণহানি হয়।