চলতি বছরের পাঠ্যবই সময়মতো সরবরাহ করেনি প্রায় দেড়শ’ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান। ফলে শিক্ষার্থীদের অনেকে মার্চ মাসেও বই পায়নি। সরকার ও শিক্ষার্থীদের বেকায়দায় ফেলা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারি ক্রয় আইন (পিপিআর) অনুযায়ী অন্তত ৩৫ কোটি টাকা জরিমানা হওয়ার কথা। কিন্তু জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি অংশ রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্টদের পার করে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ১০ কোটি টাকা জরিমানা মওকুফও করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে এখন প্রায় ২৫ কোটি টাকা জরিমানা আদায়ের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
জরিমানার বিষয়টি শিকার করে প্রকাশকরা বলছেন, এনসিটিবি একই ইস্যুতে দু’ধরনের আচরণ করছে। প্রাথমিক স্তরের কাজে শীষাসাইসহ তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিলম্বে বই দিলেও তাদের জরিমানা করা হয়নি। দেশি প্রতিষ্ঠান কাজ করুক তা চায় না বলেই এনসিটিবি এমন আচরণ করছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘বিষয়টি আসলে জরিমানা নয়, ছাপা কাজে নানান ক্রটির কারণে পিপিআর অনুযায়ী কাজের বিল দেয়ার সময় অর্থ কেটে নেয়ার নিয়ম আছে। আমরা সেটাই করছি। কাউকে ছাড় দেয়ার প্রশ্নই আসে না। নিয়মমাফিক বিল থেকে সে অর্থ কাটা হচ্ছে।`
প্রতিবছর জরিমানাভুক্ত মুদ্রণকারীদের বেশি কার্যাদেশ দেয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, কাজের অর্ডার হয় টেন্ডাররের মাধ্যমে। এনসিটিবি ইচ্ছে অনুযায়ী কেউ কাজ পায় না।
এনসিটিবি এবার ৭ স্তরে বই মুদ্রণে কার্যাদেশ দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে- প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বই, ইবতেদায়ী, দাখিল, ভোকেশনাল ও কারিগরি এবং মাধ্যমিক। প্রত্যেক স্তরেই কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের কমবেশি জরিমানা হয়েছে। বিলম্বে বই সরবরাহ, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানো, বাঁধাই ও ছাপার নিম্নমান- এ চার অপরাধেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে।
প্রাথমিক স্তরে এবার মোট ৩১টি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। এর মধ্যে তিনটি ভারতীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান। দেশি বাকি ২৮টির মধ্যে ২৬টিই জরিমানার শিকার হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৬ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এগুলোর মধ্যে সরকার গ্রুপকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আনন্দ প্রিন্টার্স ও একই ব্যক্তির মালিকানাধীন অন্য প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা। ব্রাইট প্রিন্টার্স ও একই প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বমোট প্রায় ৫৭ লাখ টাকা জরিমানা ধরা হয়েছে। এভাবে বাকি ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা ধরা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সরকার গ্রুপের অন্যতম স্বত্বাধিকারী দুলাল সরকার দাবি করেন, এ জরিমানা তাদের প্রাপ্য নয়। কেননা তারা যে বইয়ের কার্যাদেশ দেরিতে পেয়েছেন, এনসিটিবির কর্মকর্তাদের অনুরোধে তার ডেলিভারি আগে দিতে হয়েছে। কর্মকর্তাদের অনুরোধ রাখতে গিয়ে এখন তারা জরিমানার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন।