এটা শ্রীলঙ্কার অবিশ্বাস্য রূপ। সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে কিংবা তিলকারত্নে দিলশানদের বিদায়ের পর এই শ্রীলঙ্কাকে চেনার উপায় নেই। র্যাংকিংয়ে সাত নম্বরে চলে যাওয়া, যে কোনো দলের বিপক্ষে সিরিজ হারই যেন ছিল তাদের নিয়তি। তার ওপর, গত বছর আগস্ট থেকে ইনজুরির কারণে নিয়মিত অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের অনুপস্থিতি লঙ্কান দলটিকে নিয়ে যাচ্ছিল যেন অন্ধকারের গভীর অতলে।
অবশেষে অধিনায়ক ম্যাথিউজ ফিরলেন। বোলিং করতে না পারলেও তিনি বলেছিলেন ব্যাটিং করতে পারবেন। ম্যাথিউজের সঙ্গে ফিরলো সাহসও। সেই সাহসে ভর করে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে ভারতের করা ৩২১ রানের বিশাল স্কোর টপকে অবিশ্বাস্য জয় পেয়ে গেলো শ্রীলঙ্কা। সে সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনাও টিকিয়ে রাখলো তারা।
ভারতীয় বোলারদের দারুণ এক পরীক্ষা নিলো লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ভারতীয় বোলাররা সত্যিই বিশ্বমানের কি না সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের দল। দানুসকা গুণাথিলাকা, কুশল মেন্ডিস, কুশল পেরেরা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ কিংবা আসেলা গুণারত্নেদের ব্যাটে ভর করে ৮ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটের দুর্দান্ত এক জয় তুলে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
টস জিতে ভারতকেই ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ানই লঙ্কান বোলারদের ঘাম ঝরিয়ে নিলেন। ১৩৮ রানের বিশাল জুটি গড়ার পর অবশেষে তারা বিচ্ছিন্ন হন। ৭৮ রান করেন রোহিত শর্মা। শিখর ধাওয়ান আউট হন ১২৫ রান করে।
কোহলি শূন্য আর যুবরাজ ৭ রান করে আউট হয়ে গেলেও শেষ দিকে মহেন্দ্র সিং ধোনি ৬৩ রান এবং কেদার যাদব ১৩ বলে অপরাজিত ২৫ রান করে ভারতের রান নিয়ে যান তিনশ’র ওপর। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেট হারিয়ে ৩২১ রান সংগ্রহ করে ভারত।
জয়ের জন্য ৩২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দলকে বিপদে ফেলে আউট হয়ে যান নিরোশান ডিকভেলা। এরপরই গুণাথিলাকা এবং কুশল মেন্ডিস মিলে অসাধারণ এক জুটি গড়ে তোলেন। তাদের দু’জনের ১৫৯ রানের বিশাল জুটিই লঙ্কানদের জয়ের পথ রচনা করে।
৭২ বলে ৭৬ রান করে রানআউট হয়ে যান গুণাথিলাকা। ৭টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল ২টি ছক্কার মার। কুশল মেন্ডিসেরও দুর্ভাগ্য, তিনিও রানআউট হন। ৯৩ বলে করেন ৮৯ রান। তিনি ইনিংস সাজান ১১টি বাউন্ডারির সঙ্গে ১টি ছক্কা দিয়ে।
এ দু’জন যে সাহসের সঞ্চার করে গেলেন এবং যে পথ দেখিয়ে দিয়ে গেলেন, তা থেকে পিছপা হয়নি পরের ব্যাটসম্যানরা। কুশল পেরেরা আহত হয়ে মাঠ থেকে বের হওয়ার আগে ৪৪ বলে খেলেন ৪৭ রানের ইনিংস। পেরেরা আহত হয়ে মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার পর উইকেটে আসেন অ্যাসেলা গুনারত্নে।
ম্যাথিউজ আর গুনারত্নে মিলে শেষের ফিনিশিংটা দিয়ে দেন। তারা জুটি গড়েন ৫১ রানের। মাত্র ৩৪ বলে। এরই মধ্যে ইনজুরি থেকে ফেরা অধিনায়ক ম্যাথিউজ ৪৫ বলে ৫২ রান করে অপরাজিত থাকেন। ২১ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন গুনারত্নে। ভারতীয় বোলারদের যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবে পিটিয়ে শেষ পর্যন্ত ৮ বল হাতে রেখেই, মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা।