কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নে সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও এতে শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে অনীহা রয়ে গেছে। যার বাস্তব চিত্র ধরা পড়েছে একাদশে ভর্তির কার্যক্রমে।
১৫৪টি সরকারি-বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠানে একটিও ভর্তির আবেদন জমা পড়েনি।
অন্যদিকে মাদরাসায়ও শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। ৭১টি মাদরাসায় কেউ আবেদনই করেননি। মোট ২৮০টি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য কেউ আবেদন করেননি। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কারিগরি ও মাদরাসা ছাড়াও কেউ আবেদন করেনি এমন অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ১৬টি, যশোর বোর্ডে সাতটি, কুমিল্লা বোর্ডে দুটি, বরিশাল বোর্ডে তিনটি, দিনাজপুর বোর্ডে একটি, রাজশাহী বোর্ডে ২৬টি কলেজ রয়েছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, চলতি বছর কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে ৮৩ হাজার ৬০৩ জন পাস করেন। একজন শিক্ষার্থীর ১০টি কলেজে আবেদন করার সুযোগ অনুযায়ী ১ লাখ ৪ হাজার ৪৮৯টি আবেদন করা হয়েছে। সারাদেশে ১ হাজার ৮৮৭টি কারিগরি কলেজের মধ্যে প্রথম মেধা তালিকায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৫৭০ জন। আবেদনকারীদের মধ্যে ৫৭৪ জন ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে বাকি।
অন্যদিকে ১৫৪টি কারিগরি প্রতিষ্ঠানে কেউ আবেদনই করেনি। ৪৭৮টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাত্র ১০ জন করে আবেদন করেছে। ২০ জন আবেদন করেছে এমন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭০৫টি। সে হিসেবে সারাদেশের প্রায় অর্ধেক কারিগরি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিয়েছে।
যত্রতত্র কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা এবং সেগুলো মানহীন হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভর্তিতে অনীহা দেখাচ্ছেন বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন। যত্রতত্র প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার বিষয়টি স্বীকার করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠান অনেক, কিন্তু মানসম্মত নয়। এ কারণে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে আগ্রহী হচ্ছে না।
তিনি বলেন, শূন্য আসন পূরণে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ভর্তি চলমান রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে নতুনভাবে আবারও ভর্তির আবেদন গ্রহণ করা হবে।
এদিকে মাদরাসা বোর্ডের ৭১টি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী শূন্য রয়েছে। ২ হাজার ৭৫১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০ জন করে আবেদন করেছে ১৯৬টি ও ২০ জন আবেদন করেছে ৬৭৫টি মাদরাসায়। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিয়েছে।
যদিও মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়েফ উল্যা জানিয়েছেন, তারা বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখবেন। শিক্ষার্থী শূন্য থাকলে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে দশ বোর্ডের মাত্র ৩৩৭টি কলেজের সব আসন পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ১১১টি, চট্টগ্রামে ৩৮টি, যশোরে ১৭টি, কুমিল্লায় ৪৫টি, বরিশালে ১৩টি, দিনাজপুরে ১৯টি, সিলেটে ১৭টি, রাজশাহীতে ৩৩টি এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৪৪টি কলেজ রয়েছে। তবে একটি মাদরাসায়ও আসন পূর্ণ হয়নি।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, সারাদেশে ভালোমানের কলেজের সংখ্যা কম থাকায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ভালো ফল পেয়েও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রথম তালিকায় স্থান পাননি ৬১ হাজার ৯৯ জন ভর্তিচ্ছু। এমনকি সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পেয়েও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে তিন হাজার ৮৯১ জন শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির প্রথম মেধা তালিকায় স্থান পাননি। আর দশ শিক্ষা বোর্ডে প্রথম তালিকায় স্থান পাননি মোট পাঁচ হাজার ৯৪৬ জন জিপিএ-৫ ধারী।
সারাদেশে আসন সংখ্যা কমের জন্য এ অবস্থার সৃষ্টি হয়নি বরং আসন পর্যাপ্ত রয়েছে। কিন্তু পছন্দের প্রতিষ্ঠান রয়েছে কম। দেখা গেছে, কলেজের অবকাঠামো, একাডেমিক কার্যক্রম, শিক্ষার পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় সারাদেশের দুই হাজার ৬৪০টি কলেজে একজন থেকে সর্বোচ্চ ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। এসব কলেজ পাঁচজন বা দশজন করে শিক্ষার্থী ভর্তি নিলে প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। কলেজগুলো একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রাখতে পারে বলেও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের হিসাবে, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় সারাদেশে এমন কলেজ রয়েছে ৯ হাজার ১৫৮টি। এসব কলেজে আসন রয়েছে ২৮ লাখ ৬২ হাজার ৯টি। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন মোট ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭২২ জন। এর মধ্যে কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন ১৩ লাখ দশ হাজার ৯৪৭ জন। ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৮ জন। প্রথম পর্যায়ে ৬১ হাজার ৯৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নির্বাচিত হননি। আর ১২ হাজার ৭৭৫জন শিক্ষার্থী কোনো প্রতিষ্ঠানেই ভর্তির আবেদন করেননি।
এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘যারা প্রথম পর্যায়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়নি তাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আবেদনকারীদের মধ্যে ৯৫ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রথম তালিকায় স্থান পেয়েছে, অন্যরা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তালিকায় আসবে। তবে দুঃশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। সবাই ভর্তির সুযোগ পাবে। কারণ সারাদেশের কলেজে ২৮ লাখ ৬২ হাজার আসন রয়েছে।’
উল্লেখ্য, ৪ জুন (রোববার) রাতে কলেজে ভর্তির প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়। আগামী ১৩ জুন দ্বিতীয় এবং ১৮ জুন তৃতীয় তালিকা প্রকাশ করা হবে।