পুরান ঢাকার ইফতারির ঐতিহ্যের কথা অনেক আগেই শুনেছেন মালেক মিয়া। এ বছরই প্রথম ঢাকায় এসেছেন তিনি। থাকেন মিরপুরে। তিনি রোববার পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতারির স্বাদ নিতে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।
মালেক মিয়া বলেন, অনেক আগেই পুরান ঢাকার ইফতারির সুনাম শুনেছি। কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে অনেক আগ্রহ নিয়ে এখানে ইফতার করতে এসেছি। পুরান ঢাকার বিভিন্ন আয়োজন দেখে রীতিমত পুলকিত আমি।
ঐতিহ্যবাহী ইফতারির স্বাদ নিতে মালেক মিযার মতো অনেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন পুরান ঢাকায়। ইফতারির জন্য পুরান ঢাকার আলাদা খ্যাতি রয়েছে অনেক আগে থেকেই। ব্যবসায়ীরাও ঐতিহ্য ধরে রাখতে তৎপর। ইফতার পণ্যের পশরা সাজিয়ে ভোজনরসিকদের নজর কাড়ার চেষ্টা করেন তারা। প্রতি বছরের মতো এবারও সরগরম হয়ে উঠেছে পুরান ঢাকার ইফতারির বাজার। রোজাদারদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী বাহারি ধরনের ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। ফুটপাত থেকে পাঁচতারা রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত সবখানেই তৈরি হচ্ছে বাহারি ইফতার পণ্য।
বাংলাবাজার, সদরঘাট, নবাবপুর, বংশাল, সিদ্দিকবাজার, গুলিস্তান, কোর্ট এলাকা, ওয়ারি, লক্ষ্মীবাজার, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, টিপু সুলতান রোড, ধোলাইখালসহ নানা স্থানে শাহী ও খানদানি ইফতারির শত শত দোকানে রকমারি ইফতারির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। দুপুর একটার পর পরই ইফতারির বাজার বসছে রাস্তার ধারে। আসরের নামাজের আগেই হাজার হাজার ক্রেতা আসেন ইফতারির বাজারে। একেক দোকানে একেক ধরনের ইফতারি নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ঘুরে পছন্দের ইফতারি কিনছেন। অনেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে পুরান ঢাকায় ইফতার সামগ্রী কিনতে আসেন। প্রতিদিন পুরান ঢাকার ইফতারির বাজারে কোটি টাকার ইফতার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
ইফতারির আলোচনা এলেই সবার আগে নাম আসে পুরান ঢাকার চকবাজারের ‘বড় বাপের পোলায় খায়’। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে আস্ত মুরগির রোস্ট, খাসির রোস্ট, ঝাল খাসির রান, কোয়েল ভুনা, কবুতর ভুনা, পেঁয়াজু, বেগুনি, ঘুগনি, মোরগ পোলাও, শাহী জিলাপি, পেস্তা বাদামের শরবত, সুতি কাবাব, টিকা কাবাব, শাকপুলি, জালি কাবাব, আলুর চপ, দইবড়া, মাঠা ইত্যাদি। পাশাপাশি শাহী জিলাপির রয়েছে আলাদা নাম-ডাক। দোকানভেদে দামে তারতম্য রয়েছে এসব ইফতার সামগ্রীর।
অন্যদিকে ইফতার বাজারে এ বছর শাহী ইফতার নিয়ে এসেছে ডিসেন্ট বেকারি, আনন্দ বেকারি, ইউসুফ বেকারি, রস, আল-রাজ্জাক, ঢাকা বিরিয়ানী হাউজের মতো প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া মোগল ফুডস ইফতার বাজারে এনেছে বৈচিত্র। আল-রাজ্জাক হোটেল কর্তৃপক্ষ এবারের ইফতারিতে কিছুটা নতুনত্ব নিয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে পুরান ঢাকার ইফতারির বাজার জমজমাট।
বিক্রেতা মাজেদুল হাসান বলেন, বাহারি স্বাদের ইফতার সামগ্রী বিক্রি পুরাণ ঢাকার একটি ঐতিহ্য। আর আমরা এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি। ক্রেতারাও ঐতিহ্যবাহী ইফতারির জন্য এখানে ছুটে আসেন।
আরেক বিক্রেতা মুতাসিম বিল্লাহ জানান, ইফতারির বাজারে নতুনত্ব তেমন না থাকলেও ঐতিহ্যবাহী সব জিনিসই প্রতিবছরের মতো পাওয়া যাচ্ছে। ইফতারির বাজারে আসা নানা পণ্যের মধ্যে ভেজাল আর ভালো বাছাই করার কোনো উপায় নেই বলেও জানান এই বিক্রেতা।
রাজধানীর বনানী থেকে আসা মাহাবুব আলম বলেন, পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতার সামগ্রী দিয়ে ইফতার করার খুব ইচ্ছে ছিল । যানজটের কারণে আসা সম্ভব হয় না। অনেকবার চেষ্টা করার পর আজ পুরান ঢাকায় ইফতার করতে পারব বলে খুব ভালো লাগছে। এখানে খাবারের মানও ভালো। তবে দাম একটু বেশি।