কারারক্ষীদের গল্প বলছেন বন্দি। ‘‘একটি পার্টিতে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে অনেককে মেরে ফেলেছিল আমার ছেলে উদে। শুনে ওর গাড়িগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিলাম। রোলস রয়েস, ফেরারি, পোরশে’’— বলতে বলতে চোয়াল শক্ত হয় ইরাকের গদিচ্যুত সম্রাটের। মার্কিন সেনার হাতে ধরা পড়ার সময়েও যার প্রথম কথা ছিল, ‘‘আমি সাদ্দাম হুসেন। ইরাকের প্রেসিডেন্ট।’’
গণহত্যার দায়ে ক’দিন বাদেই ঝুলতে হবে ফাঁসিতেও। জীবনের সেই শেষ ৬ মাস বাগদাদের জেলে সাদ্দামের উপরে নজরদারির দায়িত্বে ছিলেন আমেরিকার ৫৫১তম মিলিটারি পুলিশ কোম্পানির জনা ১২ সদস্য। উইল বারডেনওয়েরপার ছিলেন তাদের একজন।
বইটা তিনিই লিখেছেন— ‘দ্য প্রিজনার ইন হিজ প্যালেস: সাদ্দাম হুসেন, হিজ আমেরিকান গার্ডস অ্যান্ড হোয়াট হিস্ট্রি লিভস আনসেড’। ইরাকের গদিচ্যুত প্রেসিডেন্টকে খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতার ফসল সেই বই।
উইল লিখছেন, রেডিওয় মার্কিন গায়িকা মেরি জে ব্লিজের গান শুনতে ভালোবাসতেন সাদ্দাম। টিভিতে শিশুদের অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে খিলখিলিয়ে হেসেও উঠতেন। বাগান করতেন। সাইক্লিং মেশিনে শরীরচর্চা করতেন, আবার দেদার মিষ্টি খেতেও ভালবাসতেন। মাফিন ছিল বড় প্রিয়।
উইল লিখছেন, ‘‘সাদ্দাম প্রাত:রাশে প্রথমে খেতেন ডিমের ওমলেট। তার পরে মাফিন। সব শেষে তাজা ফল। ওমলেট ছেঁড়া-ফাটা থাকলে কখনওই খেতেন না।’’ আর ছিল কোহিবা চুরুট,— ভেজা কাপড়ে জড়িয়ে বাক্সে রাখা।
রক্ষীদের সাদ্দাম বলেছিলেন, তাকে চুরুট খাওয়ার কৌশল শিখিয়েছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো।
নানা গল্প হতো কারারক্ষীদের সঙ্গে। ছেলেমেয়েদের স্কুলের প্রথম দিনের গল্প। ছেলেকে সাজা দেয়ার গল্প। কোথায় যেন তৈরি হয় একটা সখ্য। হয়তো তাই সাদ্দামের ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পরে একটা শূন্যতা গ্রাস করেছিল রক্ষীদের অনেককেই। এক জন বলেই ফেলেছিলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, নিজের পরিবারের কেউ মারা গিয়েছে। সেই মৃত্যুর জন্য যেন আমিই দায়ী।’’