দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে পাঁচ বছর আগে যাত্রা শুরু করা ‘নাগরিক ঐক্য’ শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের এই ঘোষণা দেন। সংগঠনের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কল্যাণমুখী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয়ে নাগরিক ঐক্য এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দ্বিদলীয় রাজনীতির অপধারা থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করতেই নাগরিক ঐক্য রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। এই দলটি দেশের বড় দুই দলের বাইরে এসে মানুষর জন্য কাজ করার শক্তি যোগাবে। দেশের আকাংখা পুরণে নতুন এই রাজনৈতিক দল জনগণের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে দ্বিদলীয় অপরাজনীতির চক্র থেকে বেরিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। জনগণের কল্যাণ করাই হবে এই বিকল্প রাজনীতির উদ্দেশ্য। ক্ষমতাসীন দলগুলোর দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতিই যে দেশের মূল সমস্যা সেটা আজ দিনের আলোর মতো পরিস্কার। স্রেফ নিজেদের আখের গোছানো নয় জনগণের কল্যাণ করাই হবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের মূল উদ্দেশ্য।’
দেশের বিরাজিত পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন,‘ এই দেশটা ভয়ের চাদরে ঢাকা পড়ে আছে। কোনো রাষ্ট্রে ক্ষমতায় থাকা সরকার যখন সব কিছুতেই ভীত থাকে তখন সেই সরকার আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। দেশের আজ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ভিষণ ভাবে সংকুচিত হয়েছে। এমনকি ফেইসবুকেও অতি তুচ্ছ কথা বলার জন্য মানুষের বিরুদ্ধে নিপীড়নমূলক মামলা হয়েছে। ব্যাংকে অলস পড়ে আছে বিশাল অংকের টাকা।’
মান্না বলেন, ‘দেশে দুই দুই কোটির বেশী মানুষ চরম দারিদ্রসীমার নীচে জীবনযাপন করছে। সরকারী হিসেবেই দেশে ২৬ লক্ষ মানুষ বেকার। শুধু মাত্র চিকিৎসা খরচ মিটাতেই দেশে প্রতি বছর ৬৬ লক্ষ মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে চলে যায়। প্রধানত দেশের তিন শ্রেনী অর্থাৎ কৃষক, প্রবাসী শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিকের রক্তে ঘামে অর্জিত ৬লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার অঙ্গিকার করে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম ভারতের আসাম ও অরুণাচল প্রদেশের মধ্যে সংযোগকারী ৯.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের সেতু তৈরীতে খরচ হয়েছে ১১৮০ কোটি টাকা। আর আমাদের ৬কিলোমিটারের পদ্মা সেতু তৈরীতে খরচ হচ্ছে ২৯ হাজার কোটি টাকা। ইউরোপে চার লেনের নতুন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটার প্রতি খরচ হয় ২৮ কোটি টাকা। পাশের ভারতে এ খরচ ১০ কোটি ও চীনে ১৩ কোটি। অথচ বাংলাদেশের তিনটি মহাসড়ক চার লেনে উন্নিত করতে খরচ ধরা হয়েছে কিলোমিটার প্রতি ৫৯ কোটি টাকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘কৃষক, প্রবাসী শ্রমিক, গার্মেন্টস শ্রমিকের রক্তে ঘামে অর্জিত প্রবৃদ্ধি লুট করে কিছু মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য এ দেশ স্বাধীন হয়নি। মানুষের রক্ত-কষ্টে- ঘামে অর্জিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফর মানুষের কাছেই নিয়ে যেতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।