বাজেটে প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ফলে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। একইসঙ্গে নতুন ভ্যাট আইন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্পর্শ করবে না বলে জানিয়েছেন।
শুক্রবার (২ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়াতনে আয়োজিত বাজেটোত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আগে ৩০-৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্ণওভার হলে ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হতো। প্রস্তাবিত বাজেটে এই টার্ণওভারের পরিমাণ করা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত। এর মানে টার্ণওভারের পরিসীমা বাড়ানোর ফলে ক্ষুদ্র ও মধ্য শ্রেণির ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিতে হবে না। বড় ব্যবসায়ীদের ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট দিবে। যা আগে বিভিন্ন স্ল্যাবে আরও বেশি দিতে হতো। এখন কম দিতে হবে, তাই পণ্যের দাম বাড়বে না।
মুহিত আরও বলেন, আমার মতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার বাস্তবায়ন হলেও বাড়বে না দ্রব্যমূল্য। প্রত্যেক বাজেটই উচ্চভিলাসী, কোনো বাজেটেরই আকার আগের বাজেটের চেয়ে কম হয় না। এ বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে।
বাজেট বাস্তাবায়নের সক্ষমতা নিয়েও আত্মবিশ্বাসী মুহিত। মন্ত্রী বলেন, ব্যাংক হিসাবে নতুন ধার্য করা আবগারি শুল্কের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ সমস্যায় পড়বে না। কারণ যারা ব্যাংকে এক লাখ টাকার বেশি রাখবেন, তাদের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ করা হবে। বড় লোকের ডেফিনেশন (সংজ্ঞা) দেয়া মুশকিল। আমার মনে হয় ১ লাখ টাকা পর্যন্ত যার ডিপোজিট আছে, তাকে সম্পূর্ণ ভারমুক্ত রাখা সেটাই যথেষ্ট। তার বেশি যারা আছেন তারা মনে হয় যথেষ্ট সম্পদশালী আমাদের দেশের তুলনায়। সুতরাং তাদের জন্য এটা কোনো সমস্যা হবে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক খাতে লুটপাট হচ্ছে। আগে সরকারি ব্যাংকগুলোতে হতো, এখন বেসরকারি ব্যাংকে হচ্ছে’ এই অ্যাজামশন (ধারণা) আমাদের মানতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ ব্যাংক খাতে জালিয়াতি, চুরিচামারি হয়ই। সব সময় হয়, সব দেশেই হয়। জালিয়াতি হয়তো বা কোথাও একটু বেশি হয়। আমাদের দেশে আগে একটু বেশিই হয়েছিল। এখন আমরা সেটা একটু কমাতে পেরেছি। ব্যাংক লুটপাট হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। তবে দুই-একটি ব্যাংকে সমস্যা আছে। সমস্যাগুলো সমাধানেরও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
সঞ্চয়পত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমমন্বয় করা হবে। আগে অনেক দিন পর পর এ সুদের হার সমন্বয় করা হতো। কিন্তু এখন এটি প্রতিবছরে অন্তত একবার সমন্বয় করা হবে। কারণ বাজারের সুদ হারের থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহারে অনেক বৈষম্য হওয়াটা যৌক্তিকতা নেই। তবে অল্প ব্যবধান থাকবে। বাজারে ৭ শতাংশ আর সঞ্চয়পত্রে ১১ শতাংশ হবে এটা ঠিক না। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোতে প্রনোদণা কখনো দেওয়া হবে না। তবে রেমিট্যান্স পাঠানোতে যেসব খরচ হয় তা আর দিতে হবে না। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারি। অর্থমন্ত্রী বলেন, এই বাজেটে দারিদ্র বিমোচনের জন্য ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। জেন্ডার সমতায় ২৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে একটি কথা সামনে এসেছে বৈদেশিক সহায়তার আকার একটু বেশি ধরা হয়েছে। মুহিত বলেন, গত কয়েক বছরে ধরে বিপুলভাবে আমরা বৈদেশিক সহায়তা আদায় করছি। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আশা করছি সামনে আমাদের বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়বে। এ বিষয় নিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বাস্তবায়কারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে। কিন্তু এবার একটু বেশিই বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)-এর প্রবৃদ্ধি যদি এক শতাংশ বাড়ে, তাহলে দেড় লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। এই হিসাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়লে আমাদের কর্মসংস্থানের ঘাটতি থাকবে না। এক প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, বাজেটের কোথাও কোনো দূর্বলতা নেই, পুরো বাজেটই উজ্জ্বল। এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট হলফ করে বলতে পারি। এই বেষ্ট বাজেটের জন্য যে পরিশ্রম করা দরকার আমি করেছি। বাজেট তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তারও যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। বাজেটের কোথাও দুর্বলতা আছে বলে আমার মনে হয় না।
আর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, তেলের দাম কমানো হয়নি এ কথা সঠিক না। তেলার দাম কমানো হয়েছে। তবে যে পরিমাণ কমানোর দরকার ছিল, হয় তো সে পরিমাণ কমেনি। এ বিষয়ে আমি আর কোন মন্তব্য করবো না। কারণ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মুহিত আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের প্রভাবে চালের দাম বাড়েনি। হাওড় অঞ্চলে আগাম বন্যায় বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় চালের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। তবে চালের দাম খুব দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আযমসহ অন্যান্যরা।