দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে পৃথিবীর মানচিত্রে ঠাঁই করে নেয় লাল-সবুজের বাংলাদেশ। বিজয় অর্জনের ৪৬ বছর পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ।
৪৬ বছরে স্বাধীন বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৪৫ বার বাজেট পেশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের যে বাজেট উপস্থাপন করবেন সেটি হবে বাংলাদেশের ৪৬তম বাজেট। আর ব্যক্তিগতভাবে মুহিতের জন্য এটি হবে ১১তম বাজেট উপস্থাপনা। এর আগে এরশাদের আমলে ২ বার এবং আওয়ামী লীগের আমলে টানা ৮ বার বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি। এবারসহ মোট এগারবার বাজেট উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের চেয়ে মাত্র একধাপ পিছিয়ে থাকছেন আবদুল মাল আবুল মুহিত। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার আমলে মোট তিনদফায় ১২ বার বাজেট পেশ করে এখনো এগিয়ে রয়েছেন সাইফুর রহমান।
তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে পরবর্তী অর্থবছরের (২০১৮-১৯) বাজেটও আবদুল মাল মুহিতই উপস্থাপন করবেন। ৮৩ বছর পূর্ণ করা মুহিত নিজেও সে কথা জানিয়েছেন, ‘এটি (২০১৭-১৮) নয় এর পরেরটা (২০১৮-১৯) হবে আমার শেষ বাজেট।’ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই সরকারের পর আর মন্ত্রী হবেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সেক্ষেত্রে সাইফুর রহমান ও আবুল মাল আবদুল মুহিত দুজনই সমসংখ্যকবার (১২ বার করে) বাজেট পেশের গৌরবের অংশিদার হবেন এক সময়ে সিলেটের একই সংসদীয় আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এ দুই গুনী ব্যক্তি।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২-৭৩ অর্থ বছরের জন্য প্রথমবারের মতো বাজেট ঘোষণা করেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। সেই বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। তাজউদ্দিন আহমেদ এরপর আরও দুইবার বাজেট উপস্থাপন করেন। তাউজউদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের পর বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের শেষ বাজেট (১৯৭৫-৭৬) পেশ করেন আজিজুর রহমান। ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর ৩ বার বাজেট পেশ করেন সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
এছাড়া এ পর্যন্ত যারা বাজেট পেশ করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন-ড. এম এন হুদা, এম সায়েদুজ্জামান (চারবার), মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম (দুইবার), ড. ওয়াহিদুল হক, এসএএমএস কিবরিয়া (ছয়বার), মির্জা আজিজুল ইসলাম (দুইবার)।
স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনামলে অর্থমন্ত্রী হিসাবে প্রথমবারের মতো ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে বাজেট দেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরের বাজেটও দেন তিনি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয়মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আবুল মাল আবদুল মহিত। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভায় অর্থমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এরফলে আওয়ামী লীগ সরকারের দুই আমলে অর্থমন্ত্রী হিসাবে টানা ৮ বার বাজেট পেশ করেন মুহিত। বৃহস্পতিবার বাজেট পেশের মাধ্যমে টানা ৯ম বার বাজেট পেশ করার অনন্য নজির স্থাপন করতে যাচ্ছেন সবচেয়ে বেশি বয়সে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মুহিত।
২০১৬-২০১৭ অর্থবছর থেকে ১৯৭২-৭৩ বছরে যাঁরা বাজেট পেশ করেছেন এবং বাজেটের আকার কত ছিল তা নিম্নে দেওয়া হলো:
২০১৬-১৭ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা ২০১২-১৩ আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা। ২০১১-১২ আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১৬৫,০০০ কোটি টাকা ২০১০-১১ আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১৩২,১৭০ কোটি টাকা ২০০৯-১০ আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১১৩,৮১৫ কোটি টাকা ২০০৮-’০৯ মির্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা ২০০৭-’০৮ মির্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা ২০০৬-’০৭ এম সাইফুর রহমান ৬৯৭৪০ কোটি টাকা ২০০৫-’০৬ এম সাইফুর রহমান ৬১০৫৮ কোটি টাকা ২০০৪-’০৫ এম সাইফুর রহমান ৫৭২৪৮ কোটি টাকা ২০০৩-’০৪ এম সাইফুর রহমান ৫১৯৮০ কোটি টাকা ২০০২-’০৩ এম সাইফুর রহমান ৪৪৮৫৪ কোটি টাকা ২০০১-’০২ এসএএমএস কিবরিয়া ৪২৩০৬ কোটি টাকা ২০০০-’০১ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৮৫২৪ কোটি টাকা ১৯৯৯-’০০ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৪২৫২ কোটি টাকা ১৯৯৮-’৯৯ এসএএমএস কিবরিয়া ২৯৫৩৭ কোটি টাকা ১৯৯৭-’৯৮ এসএএমএস কিবরিয়া ২৭৭৮৬ কোটি টাকা ১৯৯৬-’৯৭ এসএএমএস কিবরিয়া ২৪৬০৩ কোটি টাকা ১৯৯৫-’৯৬ এম সাইফুর রহমান ২৩১৭০ কোটি টাকা ১৯৯৪-’৯৫ এম সাইফুর রহমান ২০৯৪৮ কোটি টাকা ১৯৯৩-’৯৪ এম সাইফুর রহমান ১৯০৫০ কোটি টাকা ১৯৯২-’৯৩ এম সাইফুর রহমান ১৭৬০৭ কোটি টাকা ১৯৯১-’৯২ এম সাইফুর রহমান ১৫৫৮৪ কোটি টাকা ১৯৯০-’৯১ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১২৯৬০ কোটি টাকা ১৯৮৯-’৯০ ড. ওয়াহিদুল হক ১২৭০৩ কোটি টাকা ১৯৮৮-’৮৯ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১০৫৬৫ কোটি টাকা ১৯৮৭-’৮৮ এম সায়েদুজ্জামান ৮৫২৭ কোটি টাকা ১৯৮৬-’৮৭ এম সায়েদুজ্জামান ৮৫০৪ কোটি টাকা ১৯৮৫-’৮৬ এম সায়েদুজ্জামান ৭১৩৮ কোটি টাকা ১৮৪-’৮৫ এম সায়েদুজ্জামান ৬৬৯৯ কোটি টাকা ১৯৮৩-’৮৪ এ এম এ মুহিত ৫৮৯৬ কোটি টাকা ১৯৮২-’৮৩ এ এম এ মুহিত ৪৭৩৮ কোটি টাকা ১৯৮১-’৮২ এম সাইফুর রহমান ৪৬৭৭ কোটি টাকা ১৯৮০-’৮১ এম সাইফুর রহমান ৪১০৮ কোটি টাকা ১৯৭৯-’৮০ ড. এম এন হুদা ৩৩১৭ কোটি টাকা ১৯৭৮-’৭৯ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২৪৯৯ কোটি টাকা ১৯৭৭-’৭৮ লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান ২১৮৪ কোটি টাকা ১৯৭৬-’৭৭ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা ১৯৭৫-’৭৬ ড. আজিজুর রহমান ১৫৪৯.১৯ কোটি টাকা ১৯৭৪-’৭৫ তাজউদ্দিন আহমেদ ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকা ১৯৭৩-’৭৪ তাজউদ্দিন আহমেদ ৯৯৫ কোটি টাকা ১৯৭২-’৭৩ তাজউদ্দিন আহমেদ ৭৮৬ কোটি টাকা।