নির্বাচন কমিশন জনসংখ্যার ভিত্তিতে যে আসন নির্ধারণের কথা বলেছে, এমনটি হলে শুধু ঢাকা শহরেই ১০০টি আসন লাগবে বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরায়েজী (পিরোজপুর-৩)।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে বেলা ১১টা ৫ মিনিটে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ১৬তম (বাজেট) অধিবেশনের প্রথম দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।
রুস্তম আলী ফরায়েজী বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনের একটা বিবৃতি দেখলাম। সেখানে বলা হয়েছে, নির্বাচনী সীমানা করা হবে জনসংখ্যার ভিত্তিতে। কিন্তু ঢাকা শহরের জনসংখ্যা সবারই জানা আছে। শুধু লালবাগে এক কিলোমিটারে ২০ লাখ জনতা থাকে। ওই হিসাবে যদি সিট ঠিক করা হয় তাহলে ১০০ সিট লাগবে শুধু ঢাকা সিটিতেই। ঢাকার আশেপাশে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ধামরাই এসব অঞ্চলে ২০০ থেকে আড়াই শ সিট লাগবে জনসংখ্যায়। সারা বাংলাদেশ তখন খাঁ-খাঁ করবে, মরুভূমিতে পরিণত হবে। একেবারে দেখা যাবে বরগুনা থেকে শুরু করে বরিশাল পর্যন্ত হবে ১ সিট। কারণ জনসাধারণ তো কর্মক্ষেত্রের জন্য ঢাকাতে আসে।
তিনি বলেন, আমার নিজস্ব এলাকার দুই থেকে তিন লাখ লোক গাজীপুরে গার্মেন্টসে কাজ করে। এখানে তারা ভোটার হয়েছে। কিন্তু তাদের পরিবার সব এলাকায়। আজকে যদি জনসংখ্যার ভিত্তিতে হয় তাহলে তো ওই এলাকা বঞ্চিত হয়ে যাবে। শুধু জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে কোন এলাকা হয়নি। পিরোজপুর চার আসন থেকে একটা আসন এবং বরগুনা থেকে একটা আসন কাটা হয়েছে।
রুস্তম আলী ফরায়েজী বলেন, উপকূলীয় এলাকা এমনিতেই বঞ্চিত। আজকে গেল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’। এই ‘মোরা’ যদি খারাপের দিকে চলে যেত, তাহলে হাজার-হাজার মানুষ মারা যেত। নদীতে ভেসে যেত। এ দেশে ৪৭৮ বার প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে। স্বাধীনতার পরও ২৫০ বারের বেশি হয়েছে। তাদের সেই অবস্থা চিন্তা করতে হবে। তারা জীবনযুদ্ধে কোনো রকম বেঁচে আছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা নাই। শিক্ষা নাই। আলো থেকে বঞ্চিত। বিদ্যুৎ নাই। ভালো স্কুল-কলেজ নাই। এখানে আয়তন বেশি। খালে-বিলে ভরা। একটি এলাকা থেকে আরেকটি এলাকায় যেতে সময় লাগে। একটা ইউনিয়নে ঘুরতে গেলে একজন সংসদ সদস্যের সাত থেকে আট দিন লাগে।
তিনি বলেন, ওখানে (বিবৃতি) বলে হয়েছে, আয় কম, অনগ্রসরতা, প্রয়োজনীয়তা এবং জনসংখ্যা এ ৪টার ওপর ভিত্তি করে ঠিক করা হবে। এ বিষয়টি যদি করা হয় তাহলে সামগ্রিকভাবে সারা দেশের গ্রাম উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবে। জনপ্রতিনিধি থেকে বঞ্চিত হবে। সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক। তাহলে আমরা প্রশ্ন করতে পারি, আমরা যে বাজেটে টাকা বরাদ্দ করি সে বাজেটের টাকা কোথায় বরাদ্দ করা হয়? ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং বড় বড় শহরে টাকা বেশি বরাদ্দ করা হয়। গ্রামকে বঞ্চিত করে আরেকটি শহরের প্রাণ সঞ্চার করা যাবে না। এ জন্য বাস্তবভিত্তিক চিন্তা করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, এক-এগারোর সময় সামরিক শক্তি যারা ছিলেন সেই মঈনউদ্দিন এবং ফখরুদ্দিনরা যা করেছিলেন সেই ধরনের চিন্তাভাবনা যাতে না করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি আমার আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। তিনি এ বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিতে, জনস্বার্থে এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা বিবেচনা করবেন।