ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ তীব্র আকার ধারণ করে বাংলাদেশের উপকূলের আরও কাছাকাছি, ৩০৫ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। এজন্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এটি মঙ্গলবার সকাল নাগাদ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতোমধ্যে সারাদেশে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ‘মোরা’ মোকাবেলা সব ধরণের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। উপকূলীয় এলাকায় সন্ধ্যার মধ্যে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।
সোমবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল।
তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটারের মধ্যে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কি.মি. দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কি.মি. দক্ষিণে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার (৩০ মে) সকাল নাগাদ চট্রগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর উপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬২ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কি.মি. যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের কাছাকাছি এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে বলেও জানান আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস।
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের মানে হল- বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ৮৯ কি.মি. বা এর বেশি হতে পারে। প্রচন্ড ঝড়টি বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।
তবে মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ৮ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে বলে আবহাওয়া বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক
জোয়ারের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিসহ ঘন্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কি.মি. বেগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।