ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে (প্লে-গ্রুপ থেকে ‘এ’ লেভেল পর্যন্ত) মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি’র বাইরে সেশন ফি আদায় করা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন।
এ ছাড়া ইংরেজি মাধ্যম স্কুল পরিচালনায় ম্যানেজিং কমিটি গঠন, জাতীয় দিবস পালন, দেশীয় সংস্কৃতিসহ বাংলায় গুরুত্ব দেওয়াসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অনিক আর হক, জে আর খান রবিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাশেদ জাহাঙ্গীর।
পরে বদরুদ্দোজা বাদল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আদালত বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এ রায় পাওয়ার এক মাসের মধ্যে নির্দেশনাগুলো পরিপত্র আকারে জারি করে সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পাঠানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আর এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে কিনা প্রতি তিনমাস পর পর প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।’
আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন অধ্যাদেশ ১৯৬২ অনুসারে স্কুলগুলোতে অভিভাবকসহ শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে হবে।
শিক্ষক ও স্টাফ নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো ভর্তি ফি, সেশন ফি বা একাডেমিক ফি’র নামে কোনো ফি আরোপ করা যাবে না। ম্যানেজিং কমিটি ভর্তি ফি, টিউশন ফি নির্ধারণ করবে। এতে অভিভাবক প্রতিনিধিদের মতামত প্রাধান্য পাবে। এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, প্রত্যেক জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় ও দেশীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতির আবহে পালন করতে হবে। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ প্রখ্যাত বাঙালি কবি-সাহিত্যিকদের রচনাবলীর সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটাতে হবে। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু, ভাষা শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবগাঁথা ও স্বাধীনতার গৌরবজ্জল ইতিহাস শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে।
প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এখন যেভাবে বাংলা পড়ানো হচ্ছে তার চেয়ে আরও ভালভাবে শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার চর্চা করাতে হবে। যাতে তারা শুদ্ধভাবে বাংলা লিখতে, পড়তে ও বলতে পারে।
২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ফ্রি স্টাইলে চলছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নীতিমালা তৈরির প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক।
সেই প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে মাসিক বেতন, পুনঃভর্তি ফি বা সেশন চার্জ আদায়ের বিষয়ে নীতিমালা তৈরি এবং তদারক সেল গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। শিক্ষা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
সেই রুলেরই চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করা হয়।