সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের পরবর্তী শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষকে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে বারণ করেছেন আপিল বিভাগ। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে সংসদের হাতে প্রদান করে আনা ওই সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির আগে রবিবার (২১ মে) আদালত এ মন্তব্য করেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রবিবার তৃতীয় দিনের মতো আপিল শুনানি হয়। পরে দুপুরে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই শুনানি মূলতবি করেন আদালত।
বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
যুক্তিতর্ক শুরুর আগে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, কোর্টকে অ্যাড্রেস করে বক্তব্য দিবেন। সাইড টক করবেন না। কোর্টের ডেকোরাম মেইন্টেন করতে হবে। ইমোশনকে কন্ট্রোল করতে হবে। আমরা আলাপ-আলোচনা করে লিভ টু আপিল গ্রহণের দিন অ্যামিকাস কিউরি ঠিক করেছি। যদি আপনি সাজেশন্স দিতে চান, আরও কাউকে যোগ করতে চান সেটা বিবেচনা করবো। এ কোর্টে ওপেন মাইন্ড নিয়ে শুনানি হবে।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাজেশন্স দিব না। তখন আদালত বলেন, এখানে পলিটিক্যাল সাবমিশন শুনবো না। সাংবিধানিক বিষয়ে শুনানি করতে হবে।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাংবিধানিকভাবে যদি বঙ্গবন্ধুর কথা চলে আসে। তখন কী হবে? এছাড়া সাংবিধানিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলো পলিটিক্যাল বিষয়গুলো চলে আসবেই। পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। যুক্তিতর্ক অসমাপ্ত অবস্থায়ই দিনের শুনানি শেষ হয়।
রবিবার শুনানি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, আমরা বলেছি এ মামলাটি প্রিম্যাচিউর। এখানে একটি আইন পাশ করার কথা ছিল সেটিও করা হয়নি। উদারহণ দিয়ে আমি বলেছি যে শিশুটির জন্মই হয়নি সেটাকে গলাটিপে মেরে ফেলার প্রয়াস চালিয়েছে এ মামলা করে।
তিনি আরও বলেন, সংসদের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণ মূল সংবিধানের অংশই ছিল। এতে সংবিধানের মৌল কাঠামোর কোন পরিবর্তন হয়নি। মূল বিধানে ফিরে যাওয়া কোনভাবেই সবিধানের মৌল কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে না। হাইকোর্ট ডিভিশন একটি ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে রায় দিয়েছেন। এতটুকু পর্যন্ত আমি আজ বক্তব্য দিয়েছি।’
বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। এরপর তা ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। এ অবস্থায় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
এ আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে গত ৫মে আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ১৬তম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন। তিন বিচারকের মধ্যে একজন রিট আবেদনটি খারিজ করেন।
এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠদের রায় প্রকাশিত হয় গত ১১ আগস্ট এবং রিট খারিজ করে দেওয়া বিচারকের রায় প্রকাশিত হয় ৮ সেপ্টেম্বর। দুটি মিলে মোট ২৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।