যশোর প্রতিনিধি : রমজানের আগে যশোরে ন্যায্য মূল্যের টিসিবি’র পণ্যে আগ্রহ নেই ডিলারদের। ফলে অনিশ্চিতার মুখে পড়েছে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, জেলার ৮৪ ডিলারের অধিকাংশ এখনো পণ্য উত্তোলন করেনি। এমননি জেলা প্রশাসনের আহবান করা টিসিবি’র পণ্য বিক্রি সংক্রান্ত এক বৈঠকে সিংহভাগ ডিলার হাজির হননি। ফলে, রমজানে যশোরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জেলা প্রশাসন বলছে, ‘যারা পণ্য উত্তোলন করবে না তাদের ডিলারশিপ বাতিল করা হবে।’
জানা যায়, রমজান ও ঈদের আগে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার টিসিবি’র মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি করে। এজন্য এবার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিকেজি ছোলা ৭০ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, ডাল ৮০ টাকা এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা করে। এজন্য একজন ডিলার প্রতিদিন ৩০০ কেজি করে চিনি, ছোলা, ডাল এবং ২০০ লিটার সয়াবিন তেল উত্তোলন করতে পারবেন। গত ১৫ মে থেকে ডিলারদের এই পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করা কথা। তবে, এখনো পর্যন্ত যশোর সদর উপজেলায় মাত্র দুইজন ডিলার পণ্য উত্তোলন করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, যশোরে টিসিবি’র ন্যায্য মূল্যের পণ্য বিক্রির জন্য ৮৪ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ৩০ জন, কেশবপুরে ১৭ জন, মণিরামপুরে ১৪ জন, অভনগরে ১১ জন, ঝিকরগাছায় পাঁচ জন, চৌগাছা ও বাঘারপাড়ায় তিনজন করে এবং শার্শা উপজেলায় একজন ডিলার রয়েছেন। কিন্তু এসব ডিলারদের মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় মাত্র দুইজন ডিলার পণ্য উত্তোলন করেছেন। পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরুর তিন দিন পরেও এখনো বাকি ডিলাররা কোন পণ্য উত্তোলন করেননি। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে যশোরের খোলা বাজারে টিসিবি’র পণ্য বিক্রির কার্যক্রম।
যশোরে পণ্য উত্তোলনকারীদের একজন ডিলার রাসেল সরদার বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী আমি নির্ধারিত সময়ে পণ্য বিক্রি শুরু করেছি। তবে আমাদের খুলনা থেকে পণ্য উত্তোলন করতে হয়। যা সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ্য। যদি যশোরে টিসিবি’র হিমাগার থাকতো তাহলে সহজে পণ্য উত্তোলন করা সম্ভব হতো।’
একাধিক ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিভিন্ন কারণে তারা টিসিবি’র পণ্য উত্তোলন করতে নিরুসাহিত হন। তাদের খুলনা থেকে পণ্য উত্তোলন করতে হয়। এছাড়া একবারে দুই থেকে তিন দিনের বরাদ্দের বেশি পণ্য উত্তোলন করা যায় না। সেই পণ্য বিক্রি শেষ করে আবার খুলনায় পণ্য উত্তোলন করতে যেতে হয়। ফলে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। এতে তাদের লাভ হয় না। এজন্য তারা টিসিবি’র পণ্য উত্তোলনে আগ্রহী নন।
এদিকে, বুধবার (১৭ মে) যশোর জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য একটি সভা আহবান করেন জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর। ওই বৈঠকে যশোর সদর উপজেলার ৩০ জন ডিলারের উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু বৈঠকে মাত্র ছয়জন ডিলার উপস্থিত ছিলেন। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বৈঠকের সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ‘টিসিবি’র কার্যক্রম নিয়ে আমরা ধোয়াশার মধ্যে রয়েছি। গত বছর কারা কারা পণ্য উত্তোলন করেছেন আর করেননি তা আমরা জানি না। এবার আমরা খুলনা টিসিবি কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে পণ্য উত্তোলন না করাদের তালিকা নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আর যশোর সদর উপজেলার যেসব ডিলাররা আজকের সভায় উপস্থিত হননি তাদের ডিলারশিপ বাতিল সংক্রাত একটি চিঠি আগামী সপ্তাহে দেওয়া হবে।’