‘ফাস্ট ট্র্যাক’ ভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি বাড়াতে বেশি বরাদ্দ দেওয়ায় বাড়ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এডিপি হাতে নিচ্ছে সরকার। যদিও মূল এডিপির আকার হবে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সে তুলনায় আগামী অর্থবছরে ৪২ হাজার ৬৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বেশি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
মূল এডিপির (১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা) সঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ থাকবে ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। মূল এডিপির মোট বরাদ্দের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও বৈদেশিক উৎস থেকে ৫৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী রবিবার (১৪ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে নতুন অর্থবছরের এডিপি। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
এর আগে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে গত ১ মে অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। বর্ধিত সভার কার্যবিবরণী ও এনইসি সভার কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘আগামী অর্থবছর চলমান প্রকল্পগুলোতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। যাতে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বৃদ্ধি পায়। এ কারণে মোট এডিপির আকার বড় হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এডিপি বাস্তবায়নের সক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি অর্থবছর ১০ মাসে বিভিন্ন প্রকল্পে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, তা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। সুতরাং আগামী অর্থবছরে এডিপির বাস্তবায়ন বাড়বে।’
এ বিষয়ে এনইসির জন্য তৈরি করা সারসংক্ষেপে পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম বলেছেন, ‘ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে অর্জিত অর্থনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে এমডিজি পরবর্তী জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ (এসডিজি) অন্তর্ভূক্ত করে ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের উন্নয়ন নীতি-কৌশল ও লক্ষ্যসমূহ নির্ধারণ করা হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ও মধ্য মেয়াদী কৌশল ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। এ লক্ষ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপির খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।’
মেগাপ্রকল্পেবরাদ্দ :
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ হচ্ছে-পদ্মা সেতু প্রকল্পে ৫৫২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, মেট্রোরেল প্রকল্পে ৩৪২৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা,পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে ৭৬০৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৬৭৭৯ কোটি ৪ লাখ টাকা, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড বিদ্যুৎ প্রকল্পে ২২২০ কোটি টাকা। দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মায়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পে ১৫৬১ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
নতুনএডিপিতেখাতভিত্তিকসর্বোচ্চবরাদ্দ :
আগামী অর্থবছরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিবহন খাতে। এ খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হবে ৪১ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হবে বিদ্যুৎ খাতে, ১৮ হাজার ৮৫৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ শিক্ষা ও ধর্ম খাতে, ১৬ হাজার ৬৭৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। চতুর্থ সর্বোচ্চ বরাদ্দ ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে, ১৪ হাজার ৯৪৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা এবং পঞ্চম সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে, ১৪ হাজার ৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
মন্ত্রণালয়ওবিভাগভিত্তিকসর্বোচ্চবরাদ্দপাচ্ছেস্থানীয়সরকারবিভাগ :
নতুন এডিপিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ পাচ্ছে সর্বোচ্চ বরাদ্দ, ২১ হাজার ৪৬৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে বিদ্যুৎ বিভাগ, ১৮ হাজার ৮৪৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, ১৬ হাজার ৮২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
যুক্তহচ্ছে১৩১১টিপ্রকল্প :
আগামী অর্থবছরে ৯০টি নতুন প্রকল্পসহ মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৩১১টি। এর মধ্যে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ১৯৫টি (এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৭৯টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১২টি এবং জেডিসিএফ অর্থায়িত প্রকল্প রয়েছে ৪টি)। ৯০টি নতুন প্রকল্পের মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৭৭টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১২টি এবং জেডিসিএফ একটি।
পিপিপিপ্রকল্প :
আগামী অর্থবছরে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনাশিপে (পিপিপি) বাস্তবায়নের জন্য ৩৬টি প্রকল্প যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া এডিপিতে।