রির্পোটঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম.
স্থানীয় নাম : নাগ লিঙ্গম, করুপেটা
ইংরেজী নামঃCannon Ball tree
দক্ষিণ আমেরিকায় স্থানীয় নাম : করুপেটা
বৈজ্ঞানিক নামঃ Couroupita guianensis.
পরিবারঃ Lacythidaceae.
পরিচিত ঃ নাগলিঙ্গম দীর্ঘ চিরসবুজ বৃক্ষ এবং এ বৃক্ষ রাজ্যে আভিজাত্যের প্রতীক । এর আদি নিবাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ ক্যারাবিয়ান। পৃথিবীর সর্বত্র এটি কম বেশি বিস্তৃত। দুই তিন হাজার বছর ধরে ভারতে জন্মানোর কারণে অনেকে এ বৃক্ষটির উৎপত্তিস্থল ও বিবেচনা করে থাকেন। সমস্ত পৃথিবীতে এই উদ্ভিদটি বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশে ১০-১৫ টি নাগলিঙ্গম উদ্ভিদ বিদ্যমান। তারমধ্যে বি এম কলেজের বোটানিক্যাল গার্ডেন, মেহেন্দিগঞ্জে ১ টি গাছ ও ২নং চরকাউয়া গ্রামের সুধাংশ হালদারের বাড়িতে এই গাছ আছে। সুধাংশ হালদার বাড়ির এই গাছে ফুল ফল ও গাছের চারা ও পাওয়া যায়।
নাগলিঙ্গমের বর্ণনাঃ ক্যানন বলের মত ফল ধারণকারী এই বৃক্ষ ৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় । এ বৃক্ষের কান্ড সরল, উন্নত এবং উপরের দিকে শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত। বৃক্ষের বাকল বাদামী ধুসর, অমসৃণ, রুক্ষ; পাতা গুচ্ছাকৃতির এবং ৮ থেকে ৩১ সে.মি পর্যন্ত দীর্ঘ। পাতা লম্বায় ৫৭ সে.মি পর্যন্ত হতে পারে। পাতার রং সবুজ, প্রায় কালো, কিন্তু অত্যন্ত উজ্জ্বল। গ্রীষ্মকালে এদের পত্র মোচন হয়। এ বৃক্ষ বহু শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট এবং বড় বড় ডালে ফুলের মঞ্জুরি ধরে। কখনো কখনো সরা বৃক্ষের কান্ড থেকেই ফুল বের হয়। ফুলগুলো কমলা,উজ্জ্বল লাল গোলাপি রঙের, ঊর্ধ্বমুখী, ছয়টি পাপড়িযুক্ত এবং তিন মিটার দীর্ঘ মঞ্জুরিতে ফুটে থাকে। একটি বৃক্ষে প্রায় এক হাজারটি ফুল ধরতে পারে। ফুল দৈর্ঘে ৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর পাপড়ি গোলাকৃতি, বাঁকানো, মাংসল এবং ভেতর ও বাইরে যথাক্রমে গাঢ় গোলাপী ও পান্ডুর হলুদ। নাগলিঙ্গমের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর পরাগচক্র সাপের ফণারমত বাঁকানো এবং উদ্যত ভঙ্গি। রাতের বেলায় ফুল থেকে তীব্র সুগন্ধ বের হয় যা সকাল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। সারা গ্রীষ্মকাল ধরেই নাগলিঙ্গম ফুল ফোঁটে।
ফল ক্যানন বলের মত অর্থাৎ দীর্ঘ, গোলাকার, ভারি এবং ২৫ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। নয় মাসের মধ্যে ফল পরিপক্ক হয়। ফল মাটিতে পড়লে মৃদু শব্দে ফল ফেটে যায়, এবং বাতাসে ঝাঁঝালো গন্ধের সৃষ্টি করে। ফলগুলো কখনো কখনো পরিপক্ক হতে ১৮ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ফলগুলো গাছের মত শক্ত। প্রতিটি ফল থেকে প্রায় ৬৫ টি বীজ পাওয়া যায়। বীজ গুলোতে আলাদা আলাদা ফুলের মত আস্তরণ থাকে যা এদেরকে প্রতিকূল অবস্থা থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। পঁচা ফলের গন্ধ অত্যন্ত উগ্র, কুৎসিৎ। বীজ থেকে সহজেই এ বৃক্ষে ও চারা জন্মে। প্রাণীদের খাবার হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। আমাজান বনের সামান জনগোষ্ঠীর এ বৃক্ষের ফল প্রিয় খাবার। শক্ত খোলস অলংকার বা বিভিন্ন দ্রব্য বহনে ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত এই উদ্ভিদটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। এই গাছগুলোর দ্রুত বৃৃদ্ধি এবং আকর্ষণীয় ফুলের জন্য রোপণ করা হয়।
অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ এ বৃক্ষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব কম। দক্ষিণ আমেরিকায় এ বৃক্ষেও কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করা হয় । তবে সুগন্ধী ফুলের গাছ হিসেবে বাগানে বা বাড়ীর আঙ্গিণায় রোপন করা হয়। ওষুধ হিসেবে এ বৃক্ষের ফুল, পাতা এবং বাকলের নির্যাস এন্টিবায়েটিক, এন্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহূত হয়। পেটের পীড়া দূরীকরণে এর জুঁড়ি নেই। পাতা থেকে উৎপন্ন জুস ত্বকের সমস্যা দূরীকরণে খুবই কার্যকর। দক্ষিণ আমেরিকার সামানরা এর পাতা ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করে থাকে। ফলের শক্ত খোলস অলংকার বা বিভিন্ন দ্রব্য বহনে ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত এই উদ্ভিদটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক।