ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম উদ্যোক্তা ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার পর আবার ব্যাংকটিতে মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ১৩ মে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ও ২৩ মে বার্ষিক সাধারণ সভায় এসব পরিবর্তন আসতে পারে বলে কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে প্লাস-মাইনাসের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। ব্যাংকটি থেকে তাঁর সরে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আহসানুল ইসলাম প্রথম আলোকে বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করার জন্য ব্যাংকটিতে পরিচালক হিসেবে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্র তাঁর কিছু দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী লোকজন ও জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতাকারী কিছু লোকজন অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ওই ব্যক্তিদের কারণে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব তিনি যথাযথভাবে পালন করতে পারছেন না। এ কারণে ব্যক্তিগতভাবে তিনি পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্তের কথা তিনি ইতিমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তিনি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম ২০১৬ সালের ৬ মে ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর এ বছরের ৫ জানুয়ারি হঠাৎ ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ‘পদত্যাগ’ করলে তিনি নতুন ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। সেদিন রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত দিনভর পরিচালনা পর্ষদের সভায় ব্যাংকটিতে বড় পরিবর্তন আসে। একই দিন নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান সরকারের সাবেক সচিব আরাস্তু খান, আরমাড়া স্পিনিং মিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তিনি ব্যাংকটির পরিচালক। এরপর ব্যাংকটির এমডি, ডিএমডিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই শাখা পর্যায়েও নিয়োগ দেওয়া হয় ৫০ কর্মকর্তা। ঋণ বিতরণ নিয়েও প্রশ্ন তোলে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিদেশি উদ্যোক্তাদের না জানিয়েই ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনায় পরিবর্তন করা হয়েছে। আর এই পরিবর্তনে উদ্বেগ জানিয়ে বিদেশি উদ্যোক্তাদের পক্ষে চিঠি দিয়েছে সৌদিভিত্তিক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। চিঠিতে বলা হয়েছে, আইডিবিসহ সৌদি আরব, কুয়েতের উদ্যোক্তাদের ৫২ শতাংশ শেয়ার থাকার পরও ব্যাংকটির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।
এর মধ্যে এ বছরের ৩০ মার্চ ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় আইডিবির প্রতিনিধি আরিফ সুলেমান জানান, ব্যাংকে থাকা সাড়ে ৭ শতাংশ শেয়ার থেকে কিছু অংশ তাঁরা ছেড়ে দেবেন। এরপরই দেশের দুটি বড় গ্রুপ এ শেয়ার কিনতে যোগাযোগ শুরু করেছে। এ কারণে ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম সুবিধাজনক অবস্থায় নেই বলে জানা গেছে।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্তু খানের মোবাইলে ফোন করে বৃহস্পতিবার দিনভর বন্ধ পাওয়া গেছে।