রাজধানী ঢাকায় মারামারি আর চুরির অভিযোগে রুবেল নামের ১০ মাস বয়সী একটি শিশুর বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দিয়েছে পুলিশ। ঘটনার সময় শিশুটির বয়স ছিলো মাত্র ২৮দিন।
শিশুটির পাশাপাশি একজন মৃত ব্যক্তির নামেও অভিযোগ পত্র দেওয়া হয়েছে, যিনি ২০১৩ সালেই মারা গেছেন।
মঙ্গলবার (৯ মে) ওই শিশুটির আদলতে হাজিরা দেওয়ার দিন ছিল। এর আগে চলতি বছর ৩০ এপ্রিল ঢাকার আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে হয়েছিল শিশুটিকে।
এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তলব করেছেন আদালত। তবে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আদালতে হাজির হতে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার উপ পরিদর্শক মারুফুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, ‘মামলার বাদী রুবেলের নাম উল্লেখ করে এজাহারে বলেছে যে তার বয়স ত্রিশ বছর। কিন্তু পলাতক থাকায় আমি তো আর আসামিদের দেখতে পারিনি, তাই সেভাবেই অভিযোগ পত্র দেওয়া হয়েছে।’
কিন্তু তদন্তে আসামিদের সত্যিকার বিবরণ তো বেরিয়ে আসার কথা?-এই প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেননি মারুফুল ইসলাম।
মামলাটির কোনো পক্ষের প্ররোচনায় ঠিকভাবে তদন্ত না করেই অভিযোগ পত্র দেওয়া হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘আমি তদন্ত করেছি। আসলে সেখানে একটু ভুলভ্রান্তি হয়ে গেছে।’
মিরপুর থানায় দায়ের করা এজাহারে মামলার বাদী হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালের ২৬শে জুন মধ্য পাইকপাড়ায় তার জমি দখল করতে আসে ২৩জন আসামি। তারা তার দোচালা ঘরের টিন ভেঙে ফেলেন এবং সোনার চেইন ও নগদ টাকা চুরি করেন।
এজাহারে তিনি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন, যাদের মধ্যে আবুল কাশেম এবং রুবেল ও তুষার নামে তার দুই ছেলের উল্লেখ রয়েছে।
মামলায় রুবেলের বয়স ৩০বছর লেখা হলেও শিশুটির বয়স এখন মাত্র ১০ মাস।
শিশুটির পক্ষের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ৯ মার্চ মামলাটির অভিযোগ পত্র দেওয়া হয়। সেখানেই আমরা প্রথম দেখতে পাই যে একটি শিশু আর একজন মৃত ব্যক্তিকে অভিযোগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৩০ এপ্রিল শুনানির সময় আদালতের নজরে আনা হলে আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তলব করেন আর রুবেলকে জামিন দেন।
আদালত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পাইকপাড়ার একটি জমির মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পুরনো বিরোধ রয়েছে। তার জের ধরে গত বছরের ২৬ জুন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় ২৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন হাবিবুর রহমান নামের একজন ব্যক্তি।
এ বিষয়ে মামলার বাদী হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘যখন আমি মামলা করি, তখন এত লোকজন ছিল; তারা বলেছে, অমুকের বিরুদ্ধে মামলা দেন, অমুকে হামলা করেছে। তখন পুলিশও ছিল। আমি সবাইকে চিনি না। তারা যাদের নাম বলেছে, সেসব নাম দিয়েছি। তার মধ্যে কিভাবে এই শিশুর নাম এলো, কিভাবে মৃত ব্যক্তির নাম ঢুকলো, তা আমি জানি না।’
তিনি জানিয়েছেন, অভিযোগ পত্রের ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই। পুলিশ তদন্ত করে এই অভিযোগপত্র দিয়েছে।
মিরপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘এখানে যে কোনো একটা ভুল হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। কেন ছয় মাসের শিশুর বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দেওয়া হয়েছে, তার ব্যাখ্যা এসআই মারুফ দেবেন।’