রির্পোটঃ সিদ্দিকুর রহমান ॥
বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর। বরিশাল বাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার ফল এই জাদুঘরটি। তাছাড়াও যে ভবনটিতে বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর চালু করা হয়েছে, সেই ভবনটিই একটি জাদুঘর বলে মন্তব্য করেছে বরিশালের গুনীজনরা। ২০১৫ সালের জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নগরীর পুরাতন কালেক্টরেট ভবনে জাদুঘরের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর-এমপি।
এছাড়াও এই বিভাগীয় জাদুঘরের ২ তলায় ৯টি গ্যালারীতে বিভাগের ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক পরিচিতি ও খ্যাতনামা ব্যক্তিদের তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য লোকশিল্প এবং বাংলাদেশ প্রতœতত্ত্ব সম্পদ ও ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে ১ নম্বর গ্যালারিতে আজকের বরিশাল বিভাগের ভৌগলিক, প্রাকৃতিক ও প্রশাসনিক পরিচিতি। ২ নম্বর গ্যালারিতে দর্শনার্থীদের বিশ্রামকক্ষ, ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী এবং শিশুদের সাথে নিয়ে আসা মায়েদের সন্তানদের ক্ষুধা মেটানোর জন্য একটি বিশেষ কেন্দ্র। ৩ নম্বর গ্যালারিতে রয়েছে বরিশাল বিভাগের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিদর্শন। ৪ নম্বর গ্যালারিতে রয়েছে বরিশালে স্মরনীয় ব্যক্তিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রীর নিদর্শন। ৫ নম্বর গ্যালারিতে ঐতিহ্যবাহী আর্থ-সামাজিক ও প্রাকৃতিক বৈচিত্রের নিদর্শন। ৬ নম্বর গ্যালারিতে বরিশাল বিভাগের প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। ৭ নম্বর গ্যালারিতে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে প্রাপ্ত প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। ৮ নম্বর গ্যালারিতে শত বছর আগেরকার বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানের প্রতœতাত্ত্বিক নির্দশন। ৯ নম্বর গ্যালারিতে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের দেশের বিভিন্ন স্থানে খনন সম্পর্কিত তথ্য, ছবি ও প্রাপ্ত প্রতœসামগ্রী ও বরিশাল কালেক্টরেট ভবনের প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। তাছাড়া সম্পূর্ন জাদুঘরটি এখন ৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। প্রতিটি গ্যালারিতে রয়েছে সিকিউরিটি অ্যালার্ম।
জাদুঘরের তত্বাবধায়নের দায়িত্বে থাকা সহকারী কাস্টডিয়ান শাহিন আলম জানান, বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর প্রর্দশনীর সময়সূচিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সময়সূচিকে শীত ও গ্রীষ্মকালীন দুটি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে। শীতকালীন সময়ে ১ অক্টোবর থেকে ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত মঙ্গলবার থেকে শনিবার সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা এবং সোমবার দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হবে। এছাড়াও রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে। এদিকে গ্রীষ্মকালীন সময়ে ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মঙ্গলবার থেকে শনিবার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৬ টা এবং সোমবার দুপুর ২ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা রাখা হবে। এছাড়াও রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিরতি। তাছাড়া জাদুঘর পরিদর্শনে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১০টাকা, স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ টাকা, বিদেশী পর্যটকদের জন্য ১০০টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশ সমূহের পর্যটকদের জন্য ২৫ টাকা প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে। এছাড়াও ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য জাদুঘরটি বিনামূল্যে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে বাকেরগঞ্জ পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে স্বতন্ত্র কালেক্টরেটের মর্যাদা লাভ করে। প্রথম কালেক্টর নিযুক্ত হন উইলিয়াম হান্টার। ১৮২১ সালে নির্মান করা হয় এই কালেক্টরেট ভবন। বরিশাল’র পুরাতন কালেক্টরেট এই ভবনটি নিম্নগাঙ্গেয় অববাহিকায় উপনিবেশিক শাসনামলে নির্মিত প্রথম বড় ধরনের প্রশাসনিক ভবন। ভবনটির স্থাপত্য শৈলীতে গথিক-রোমানেস্কো স্থাপত্য সংস্কৃতির সংমিশ্রনের পাশাপাশি এক অপূর্ব স্থানীয় সংস্করণ (ইন্দো-মুসলিম) প্রতিফলিত হয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দুই শত বছরের প্রাচীন ও বহু অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন ও শাসনের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বরিশাল পুরাতন কালেক্টরেট ভবনকে ২০০৩ সালে সরকার সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষণা করে। এরপর ২০১৫ সালে শুরু হয় জাদুঘরে রূপান্তরের কাজ। পরবর্তীতে ঐ বছরের ৮ জুন সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি এই জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।