সন্তানের মুখ দেখার অদম্য ইচ্ছা, কিন্তু অভাবের তাড়নায় সেই ইচ্ছে ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে দেশের পোশাকাখাতের বহু নারী শ্রমিক। সন্তান নিতে সাহস পায় না তারা। এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন রেডিমেট গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমীন।
মে (১ মে) দিবস সামনে রেখে নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে এমন অভিতম ব্যক্ত করেছেন তিনি।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের কষ্টেমোড়া জীবনের বিবরণ তুলে ধরে লাভলী বলেছেন, ‘আয়ের চেয়ে তাদের খরচের ব্যবধান বিস্তর। দুর্বিসহ এই অবস্থায় পড়ে গার্মেন্টসের অনেক নারী শ্রমিককে মা হওয়ার প্রবল ইচ্ছা পাথরের নিচে চাপা দিয়েই রাখতে হচ্ছে। এখন মা হতে অনেকেই ভয় পায়। আর এই প্রবণতা দিনে দিনে বাড়ছে। যদিও এ বিষয় নিয়ে কেউ ভাবছে না।’
গার্মেন্টসের সেক্টরের চালচিত্র এবং সেখানকার নারী শ্রমিকদের বস্তিজীবনসহ আবাসস্থলের অবর্ণনীয় দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ‘নারী, বিশেষ করে বাঙালি নারীর প্রত্যেকেরই মা হওয়ার প্রবল অর্থাৎ অদম্য ইচ্ছা থাকে। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা বাংলাদেশে গার্মেন্টস সেক্টরের অনেক নারী শ্রমিকদেরকে এই ইচ্ছার অপমৃত্যু ঘটাতে বাধ্য করছে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘যে টাকা বেতন পায় তা দিয়ে বস্তিতে থেকেও একজনের পরিবারেরই চলে না, বাচ্চা নেবে কিভাবে। বস্তিতে একটি ঘরে মা ও স্বামীকে নিয়ে থাকে গার্মেন্টস নারী শ্রমিকদের অনেকেই। স্বামী-স্ত্রী পর্দা টাঙিয়ে থাকেন খাটে আর মা থাকেন খাটের নিচে। গোপনীয়তা বলতে তাদের কিছুই থাকে না। গার্মেন্টস নারীরা কেউ কেউ বাচ্চা গ্রামের বাড়িতে মায়ের কাছে রেখে আসেন। তারা বস্তিতে থেকে প্রতিদিন মাইলের পর মাইল রাস্তায় হেঁটে কর্মস্থল গার্মেন্টেসে যাতায়াত করেন। দিনের পর দিন শুধু ডাল আর ভাত খেয়ে থাকেন তারা। এভাবে কোনো রকমে কিছু পয়সা বাঁচিয়ে গ্রামে পরিবারের কাছে পাঠায়। বর্তমানের ক্রমাগত বাজার মূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এখন আর তাও জুটছে না।’
অভিজ্ঞ এই নারী গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী বলেছেন, ‘কারখানায় যথাযথ কর্মপরিবেশ ও যাতায়াতের পথে কোনো নিরাপত্তা নেই তাদের (নারী শ্রমিকদের)। হাঁটা এবং ডাল-ভাত ছাড়া তাদের জীবনে নেই কোনো সম্বল। এসব দেখে শুনে তাই এখন গার্মেন্টস শ্রমিকদের অনেকেই বাচ্চা নেওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। যদিও এসব দেখার কেউ নেই।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘যাদের বাচ্চা আছে তাদের জীবনের জ্বালা অনেক। নিজের বাচ্চা কোথায় কার কাছে রেখে আসবে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় দিন রাত কাটে অনেকের। আইন ও নিয়ম অনুযায়ী গার্মেন্টেসগুলোতে ডে কেয়ার সেন্টার থাকার কথা। অনেক কারখানা ডে কেয়ার করেছে। তবে তার অধিকাংশই আইওয়াস। যখন বায়ার আসে তখন ডে-কেয়ার চালু থাকে। বায়ার চলে গেলেই শুধু নামেই থাকে ডে কেয়ার।’
এই শ্রমিক নেত্রী বলেছেন, ‘সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে গার্মেন্টস নারীদের অনীহা এবং ডে কেয়ার এর বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে কোনো মহেলেই তেমন কোনো উচ্চবাচ্য হয় না। এইসব বিষয়ে কোনো সাঠিক পরিসংখ্যান খুঁজে পাওয়া কঠিন। এ বিষয়ে সরকার, শ্রমিক সংগঠন এবং এনজিওদের কোনো গবেষণা নেই। আমাদের সংগঠন এ বিষয়ে সরেজমিনে বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে গবেষণা করার ইচ্ছা রয়েছে আমাদের। সুযোগ সুবিধা অর্জন করে হয়তো তাড়াতাড়িই আমারা এ ব্যাপারে কাজ শুরু করতে পারবো।’