যাদের পেশির ঘাম নিংড়ানো শ্রমে এগিয়ে যায় সভ্যতার চাকা, তাদের অধিকার আদায়ের স্মৃতিময় উজ্জ্বল দিন সোমবার (১ মে); মহান মে দিবস, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রম-ঘামের জীবনের জয়গানের দিন। পৃথিবীর দেশে দেশে বঞ্চিত শ্রমজীবীদের অধিকার ফিরে পাওয়ার প্রেরণার দিনও আজ।
১৮৮৬ সালের ১ মে আমরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকদের আট ঘণ্টার শ্রম ঘণ্টা, মজুরি বৃদ্ধি, কাজের উন্নততর পরিবেশ ইত্যাদির দাবিতে একটি শ্রমিক সংগঠন শিল্প ধর্মঘটের ডাক দেয়। আন্দোলন দমাতে গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। শ্রমিকের বুকের রক্তে প্রতিষ্ঠিত হয় দাবি।
বাংলাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মে দিবস পালন করা হবে। এ বছর মে দিবসের মূল প্রতিপাদ্য- ‘শ্রমিক-মালিক গড়ব দেশ/এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’
বাংলাদেশে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনও নানা বৈষম্যের কথা শোনা যায়। সরকার পোশাক খাতসহ কয়েকটি খাতের শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করে দিলেও অনেক মালিকই তা মানেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অনেক অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। ন্যায্য মজুরি না পাওয়া তাদের জীবন মানের উন্নতি হচ্ছে না।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। ইতিহাসের ভয়াবহতম এ ভবন ধসে এক হাজার ১৩৬ জন শ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়। এ দুর্ঘটনার বিষয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যাকশন এইড। সেখানে বলা হয়, রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের মধ্যে এখনও ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ বেকার। এছাড়া ৪৮ শতাংশ শ্রমিক শারীরিক এবং ৩৩ দশমিক ৪ শতাংশ শ্রমিক মানসিকভাবে অসুস্থ। এসব কারণে তারা কাজে ফিরতে পারছেন না।
তবে পোশাক মালিকরা এ প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
এবার মে দিবসের মূল আলোচনা অনুষ্ঠান হবে সোমবার বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টায় বর্ণাট্য র্যালি হবে। র্যালিটি দৈনিক বাংলার মোড় শ্রম ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের উত্তর পাশ দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হবে। র্যালিতে সরকার, মালিক, শ্রমিকরা অংশ নেবেন।
সোমবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে মে দিবসের উপর আলোচনা সভা হবে। এতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু অংশ নেবেন। একই স্থানে বিকেল ৪টায় আরেকটি সভায় উপস্থিত থাকবেন রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক।
দিবস উপলক্ষে রাষ্টপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের কল্যাণে বর্তমান সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগ তুলে ধরে বলেছেন, ‘আমি আশা করি, মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক এবং মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধিতে আরো নিবেদিত হবেন।’
পৃথক এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘এ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে শ্রমিক-মালিকের বিদ্যমান আন্তরিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখে নতুন নতুন শিল্প স্থাপন ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সার্থক ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে শিল্পোদ্যোক্তা, মালিক ও শ্রমিকের সম্মিলিত প্রয়াস একান্তভাবে কাম্য। সকল পক্ষের ইতিবাচক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ অংশগ্রহণের মাধ্যমে শ্রম ক্ষেত্রে সামগ্রিক উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’