চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর এলাকার ‘জঙ্গি আস্তানায়’ পরিচালিত অভিযান ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায়। পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট টিমের সদস্যরা এ অভিযান পরিচালনা করেছেন। অভিযানে রফিকুল আলম আবুসহ ৪ নিহত হয়েছে। তারা সবাই আত্মঘাতী হয়েছে। এ ছাড়া ওই ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে আহত এক নারী ও এক শিশুকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই ‘জঙ্গি আস্তানার’ পাশে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খুরশিদ হোসেন।
বাড়িটি থেকে উদ্ধার করা নারী ও শিশুটি বাড়িটিতে থাকা জঙ্গি সংগঠন পুরোনো জেএমবির সদস্য আবুর স্ত্রী এবং সন্তান বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি খুরশিদ হোসেন বলেছেন, “চার জঙ্গি নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে ‘অপারেশন ইগল হান্ট’ শেষ। আবু ছাড়া অপর তিনজনের পরিচয় আপাতত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো কোনো অভিযানে এক নারী ও এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই চারজনই (আবুসহ অন্য তিনজন) আত্মঘাতী হয়েছেন।’
এর আগে বিকেল সোয়া চারটার দিকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে আহ্বান জানায় পুলিশ। সে সময় এ আহ্বানে কেউ সাড়া দেয়নি। ওই আহ্বানের পর একপর্যায়ে ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়।
শিবগঞ্জের এই ‘জঙ্গি আস্তানা’য় বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালায় সোয়াট সদস্যরা। এদিন সকালে ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ পুনরায় শুরু করেন তারা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গি আস্তানা হিসেবে যে বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে, সেটি সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাসের। বাড়িটিতে একই গ্রামের বাসিন্দা আবু (৩০) তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে অবস্থান করছে এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর সেখানে অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে বাড়িটি ঘিরে রেখেছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নিরাপত্তার স্বার্থে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বুধবার বিকেলে হেলিকপ্টারযোগে সোয়াট সদস্যরা পৌঁছানোর পর ওই দিন সন্ধ্যায় অভিযান শুরু হয়। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’। শুরুর ২ ঘণ্টা পর রাতের কারণে এই অভিযান স্থগিত করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তা ফের শুরু হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাড়িটি থেকে বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার ভোরে কয়েক দফা গুলির শব্দ ভেসে আসে। সকাল নয়টার পর সেখান থেকে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ আসে। অভিযান চলাকালে দিনভর থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়।
ঘটনাস্থলে সকালেই বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল আসে। উপস্থিত ছিল সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরাও।
দুপুর ১২টার দিকে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে মাইকে মিনিট পাঁচেক ধরে আহ্বান জানায় পুলিশ। কিন্তু এ আহ্বানে কেউ সাড়া দেয়নি।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ‘জঙ্গি আস্তানা’র স্থান থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। সেখান থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা যায়। এরপরই বাড়িটির দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের যেতে দেখা যায়।
ছবি : ফোকাস বাংলার সৌজন্যে