প্রযুক্তি আমাদের নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। যে কারণে যে কোনো ঘটনাই এখন মানুষ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ দেখাতে পারছে। এর কোনোটি মঙ্গলজনক, ইতিবাচক আবার কোনোটি অমঙ্গলের বার্তা, নেতিবাচক, বিব্রতকর। তেমনি এক নেতিবাচক ঘটনা দেখা গেলো ফেসবুক লাইভে।
থাইল্যান্ডের এক পাষণ্ড বাবা আত্মহত্যা করার আগে নিজের কন্যা শিশুকে হত্যার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেছেন।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফুকেটের নাই থন এলাকার নির্মাণাধীন একটি আবাসিক হোটেলে সোমবার (২৪ এপ্রিল) ২১ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে তিনি নিজের কন্যা শিশুকে হত্যা করেন। এই হত্যার দৃশ্য তিনি ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত হত্যা দৃশ্যের ওই ভিডিও চিত্রটি ফেসবুকে ছিল। পরে তা তুলে নেওয়া হয়।
পুলিশ বলছে, স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার পর ওই ব্যক্তি নৃশংস এ ঘটনা ঘটান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ব্যক্তির একজন স্বজন বলেন, তিনি ফেসবুকে বীভৎস ওই ভিডিওটি দেখেছেন। দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানান। কিন্তু সেখানে পুলিশের পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় ওই বাবা ও কন্যা শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, ওই ব্যক্তি নির্মাণাধীন ভবনটির ছাদ থেকে মেয়ের গলায় রশি দিয়ে নিচে ঝুলিয়ে দেন। পরে ঝুলন্ত মৃতদেহটি টেনে ওপরে তোলেন।
থাইল্যান্ডের অনলাইন পত্রিকা ফুকেট গেজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আত্মহত্যাকারী ওই ব্যক্তির নাম উত্তুসান ওংতালায়। তার ১১ মাস বয়সী কন্যা শিশুর নাম নাটালি ওংতালায়।
থালাং পুলিশ জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় ২১ বছর বয়সী জিরানুচ ত্রিরাত পুলিশকে জানায়, তার স্বামী ও কন্যাশিশুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের বাসা বান মুড দোক খাও এলাকায়। লাশ উদ্ধারের মামলাটি সাকু পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সাকু পুলিশের ক্যাপ্টেন জুলায়ুস সুভান্নিন বলেন, নির্মাণাধীন পেনিনসুলা হোটেলের ১০ মিটার উঁচু দেয়ালে ঝুলন্ত অবস্থায় উত্তুসান ও তার মেয়ে নাটালির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
জিরানুচ ত্রিরাতের চাচা সুকসান বুয়াচানিত বলেন, উত্তুসান নিখোঁজ হওয়ার আগে তাদের স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হয়। এ সময় উত্তুসান তার স্ত্রীর শ্বাসরোধের চেষ্টা করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে উত্তুসান তার ফেসবুকে ওই ভয়াবহ ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করেন। চার মিনিট ধরে ভিডিওটি সম্প্রচার হয়।
পুলিশের ক্যাপ্টেন জুলায়ুস সুভান্নিন বলেন, ‘আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের এই নৃশংস ভিডিওটি শেয়ার না করার জন্য বলেছি।’
এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ফুকেটের গভর্নর নোরাফাত প্লডথং। তিনি বলেছেন, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সরকার ওই পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দেবে।
এ ব্যাপারে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ফেসবুকে একটি হত্যা দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করেছিলেন হত্যাকারী। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো অঙ্গরাজ্যে এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ ঘটনায় এক কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে শিকাগোতে ফেসবুক লাইভে নির্যাতনের দৃশ্য প্রচার করায় ৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।