সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামালের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, ২২ বছর আগে আমি ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলাম, এ জন্য আমার লজ্জা লাগে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার (২৬ এপ্রিল) সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরতে সুজন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত ১৯ এপ্রিল রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব নিয়ে সুনামগঞ্জকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনকারীদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলে সচিব শাহ কামাল অবজ্ঞার সুরে বলেন, কিসের দুর্গত এলাকা? সুনামগঞ্জে একটি ছাগলও তো মারা যায়নি। সুনামগঞ্জকে যারা দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তাদের কোনো জ্ঞানই নেই। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নামে একটা আইন আছে। এই আইনের ২২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো এলাকার অর্ধেকের ওপরে জনসংখ্যা মরে যাওয়ার পর ওই এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হয়। না জেনে যারা এমন সস্তা দাবি জানায়, তাদের কোনো প্রকার জ্ঞানই নেই। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ ও ইউনিসেফ যদি দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানায় তাহলে সেই এলাকার প্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানাবে। মন্ত্রণালয় তদন্ত করে রাষ্ট্রপতিকে জানানোর পর রাষ্ট্রপতি তখন ওই এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করবেন।
দুর্যোগ সচিবের এমন মন্তব্যের রেশ ধরে ওই মন্ত্রণালয়ে ২২ বছর আগে দায়িত্ব পালন করা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আমার লজ্জা লাগে যে ২২ বছর আগে আমি ওই মন্ত্রণালয়ের (ত্রাণ ও দুযোগ) সচিব ছিলাম। কতজন মানুষ মারা গেলে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে হবে কোথাও এটা লেখা আছে বলে জানা নেই। এটা অবাস্তব কথা তার।’
দুর্গত এলাকা ঘোষণা করতে বাধা কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে তত্ত্বাবধয়াক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, এদেশে সিডর হয়েছে, আইলা হয়েছে। ১৯৯১ সালে সাইক্লোনে এক লাখ ৩৯ হাজার মানুষ মারা গেছে, দুর্ভিক্ষ হয়েছে। কিন্তু কখনো দুর্গত বা দুযোগ এলাকা ঘোষণা করা হয়নি। দুর্গত এলাকা ঘোষণা করলে মানুষের সুবিধা হয়, কিন্তু এটা করা হয় না কখনো, এটা দুঃখজনক। হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা না করার কোনো যুক্তি দেখি না-বলেন তিনি।
সুজনের নির্বাহী সদস্য এবং বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমাদের দেশে মানুষের বেশি সংখ্যক মৃত্যু না হলে সেটাকে দুযোগ বলা হয় না। সচিব মহোদয় নাকি বলেছেন কোনো এলাকায় অর্ধেক লোক মারা না গেলে সেখানে দুগত এলাকা ঘোষণা করা যায় না, এটা ঠিক নয়। মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে নয়, সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনা করে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম, সুজন সম্পাদক ড. বদউল আলম মজুমদার, বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক স্বপন আদনান, সুজনের সহযোগী সমন্বয়কারী সানজিদা হক বিপাশা বক্তব্য রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানায় সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন।