সিদ্দিকুর রহমান ॥
মহাত্মা অশ্বিনী কুমার টাউন হল। বরিশাল তথা দক্ষিণ বঙ্গের শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চার মূল কেন্দ্র। নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোডে অবস্থিত এই হলটি। শুরু থেকেই এই হলে বিভিন্ন ধরনের সভা, সেমিনার. নাটক, মেলা ও মৌসুমি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। এছাড়াও বরিশালের ঐতিহ্যবাহী হল বলতে যেটিকে বুঝায় সেটাই হল এই অশ্বিনী কুমার হল। এখানে অনুষ্ঠিত নানা রকমের অনুষ্ঠানে প্রতিনিয়ত সাধারণ জনগন থেকে শুরু করে সকল দপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দের পদচারণায় মুখরিত থাকে। বরিশালের উন্নয়নের জন্য যিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন, ইতিহাসের সে অবিসংবাদিত নেতা ও শিক্ষাবিদ অশ্বিনী কুমার দত্তের স্মরণে হলটির নামকরন করা হয়।
এছাড়াও হলটির পেছনে একটি ঐতিহাসিক ঘটনাও আছে। ১৯০৬ সালে রাজা বাহাদুরের হাবেলীতে মিছিলের উপর পুলিশী হামলা চালায়। এ ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য অশ্বিনী কুমার দত্ত একটি হল নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। তার পরে ১৯২০ সালে অশ্বিনী কুমার দত্তকে সভাপতি ও শরৎচন্দ্র গুহকে সম্পাদক করে হল নির্মাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং ওই বছরেই ১৫ অক্টোবর রাজা বাহাদুরের হাবেলির মালিকদের জনৈক কেদার নাথ বসুর কাছ থেকে একে ফজলুল হক, অশ্বিনী কুমার দত্ত , হরনাথ ঘোষ ও তারনী কুমার দত্ত ৪ হাজার টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করেন। পরের বছর আগস্ট মাসে হলের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হয় এবং নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৩০ সালে। তবে এর মাঝখানে অশ্বিনী কুমার দত্ত অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নেয়া হয় এবং সেখানেই ১৯২৩ সালের ৭ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়।
পরে তার মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত এক শোকসভায় সর্বসম্মতিক্রমে নির্মাণাধীন হলের নামকরন করা হয় “ অশ্বিনী কুমার টাউন হল”। জমি ক্রয় থেকে শুরু করে হলটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। এ অর্থের যোগান এসেছিল অসহযোগ আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলন, এবং ১৯২১ সালের প্রাদেশিক সম্মেলনের জন্য সংগ্রহীত তহবিল থেকে। যাদের সার্বক্ষনিক প্রচেষ্টায় হলের নির্মাণ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছিল, তাদের মধ্যে এ্যাড. বরদাকান্ত বন্দোপ্যাধায়, দুর্গামোহন সেন, ইঞ্জিঃ জ্যোতিষচন্দ্র লাহিড়ী, ওয়াহেদ রাজা চৌধুরি, হাশেম আলী খান, বাদশা মিয়া চৌধুরি, ইসলাম খান চৌধুরি প্রমুখের নাম স্মরণীয়।