বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের চাইতে বেসরকারি খাতের জনবলের দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা ভাল। এ কারণে বেসরকারি খাত এগিয়ে যায়।
সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি দেখলাম সরকারে যিনি কাজ করেছেন উনি যখন বেরিয়ে যান তখন কিন্তু তার বুদ্ধি পাঁচগুন খুলে যায়। সুচারু বুদ্ধি এবং সাংঘাতিক দক্ষ হয়ে যান। কিন্তু আমার সাথেই তাকে চুপ থাকতে দেখা গেছে, তিনি কথা বলেননি। এটা কেন?’
বুধবার বিকেলে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত এক চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নসরুল হামিদ।
গাজীপুরের কড্ডায় বেসরকারিখাতে (আইপিপি) ১৪৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও বিদ্যুৎ ক্রয়ে সামিট গ্রুপের সামিট এইস এ্যালায়েন্স পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি সই করেসরকার। সামিট এইস এ্যালায়েন্স পাওয়ার লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হোসেন চুক্তিতে সই করেন। অন্যদিকে সরকারের পক্ষে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদপাওয়ার পারচেস এগ্রিমেন্ট (পিপিএ) এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) শেখ ফয়েজুল আমীন ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিন্ট (আইএ) চুক্তিতে সই করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতের জন্য আজকে বিশেষ একটি লক্ষণীয় দিন। ১৪৯ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সাইন হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তা ছাড়া আজকে এখানে কোনো বিদেশি নেই। এটা বিশাল অর্জন।
তিনি বলেন, এখানে যারা উপস্থিত আছেন সামিটের জনা বিশেক বাকিরা বিপিডিবির। তার মানে হচ্ছে সরকারি লোকেরা বেসরকারি বিনিয়োগে বাধা দেয় একথাও সঠিক নয়। নতুন উদ্যোক্তাদের এসময় সামিটের কাছে থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
এরপর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, সচিব মহোদয় ঠিক কথাই বলেছেন, আজকে উল্লেখযোগ্য দিন। এরকম দিন অনেকগুলো এসেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎবিভাগ বিদেশিদের সাথে এগ্রিমেন্ট করে আসছে। আমরা প্রাইভেট সেক্টরে ভাল উদ্যোগ নিয়েছি। প্রায় ৪৯ শতাংশ বিদ্যুৎ প্রাইভেট সেক্টর উৎপাদন করছে। সামিট একটি বৃহৎ কোম্পানি, যারা এর বড় অংশীদার। তারা নিরবিচ্ছিন্নভাবে রয়েছেন আমাদের সাথে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে বেইসলোডগুলো পাবলিক সেক্টরে থাকবে এবং চাহিদার বাকি বিদ্যুৎ প্রাইভেট সেক্টর থেকে নেওয়া হবে। গত ৫ বছরে প্রাইভেট সেক্টর ভাল জায়গায় পৌঁছেছে। এতো দ্রুত সময়ে এ পযায়ে তারা (প্রাইভেট) চলে যাবে আশা করি নাই। এখন অনেক প্রাইভেট কোম্পানি বড় প্রজেক্টে, কোল পাওয়াররেও পার্টনারশিপে আসছে, এটা একটা ভাল দিক। সামিট গ্রুপ আমাদের জ্বালানির সাথেও আছে। তারা এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণেও কাজ করছে। ধন্যবাদ জানাই, তারা নিজের দেশে ইনভেস্টমেন্ট করছে। আমাদের প্রাইভেট সেক্টর সেভাবে গ্র করে নাই। সেভাবে মাইন্ডসেট তৈরি হয় নাই। তাও আমরা চেষ্টা করছি যে, আরও বেশি কীভাবে প্রাইভেট সেক্টরকে সহযোগিতা করা যায়।
তিনি বলেন, আগামীতে ট্রান্সমিশনে প্রাইভেট সেক্টরকে দেখতে চাই। কেবল মাত্র সরকারিভাবে ট্রান্সমিশন হবে, এটা কিন্তু না। আমরা ইতোমধ্যে ভারতের আদানি গ্রুপের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে যাচ্ছি। তাদের বৃহৎ ইনভেস্টমেন্ট ট্রান্সমিশনে হচ্ছে। সব মিলে বাংলাদেশে প্রাইভেট সেক্টরে ভাল অবস্থান তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ডেসকোর কিছু শেয়ার মার্কেটে ছাড়া হয়েছে। প্রাইভেট এনভেস্টমেন্ট আল্টিমেটলি এখানে আসছে। ডিপিডিসিকেও নিয়ে যাব। বিপিডিবি যত দ্রুত হোল্ডিং কোম্পানিতে যাবে ততই দক্ষতা বাড়বে। বিপিডিবি শক্তিশালী হবে। গত ডিসেম্বরে হোল্ডিং কোম্পানিতে যাওয়ার কথা ছিল বিপিডিবির। কিন্তু এর তিন মাস পার হয়েছে…। যাই হোক, আশা করি বিপিডিবি হোল্ডিং কোম্পানি হলে আরও শক্তিশালী হবে এবং তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ খান বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে আমরা এ সেক্টরে কাজ করছি। ১৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমরা উৎপাদন করছি। আজকে আরও ১৪৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেচুক্তি হচ্ছে। আরও ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিকল্পনা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কড্ডায় নির্মাণাধীন ১৪৯ মেগাওযাটের দ্বি-জ্বালানিভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ৭.১৫ টাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে। জ্বালানি হিসেবে হেভী ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) ব্যবহার করা হবে। গ্যাসের যোগান পাওয়া গেলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়বে ২.৮০টাকা।
জানা যায়,শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের যৌথ অংশীদারিত্বের প্রতিষ্ঠান এ্যাটকিন এ্যালায়েন্স আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ২০১১ সালে এই প্রকল্পটি শুরু করে। তবে প্রয়োজনীয় জমি সংগ্রহ করতে না পারায় তারা আর আগাতে পারেনি। এরপর প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশি অংশীদারিত্ব –এ্যাটকিন এ্যালায়েন্স পাওয়ার কো. লি. –এর সমস্ত শেয়ার কিনে নেয় সামিট পাওয়ার। বর্তমানে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।