শুক্রবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪ দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে পৌঁছান। বাংলাদেশ ও চীন যখন এক উষ্ণ সম্পর্কের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ঠিক তখনই হাসিনার এই ভারত সফর।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। অবকাঠামো থেকে প্রতিরক্ষা ক্রয় পর্যন্ত এই সম্পর্কের বিস্তৃতি। এই দুটি স্বাধীন দেশের মধ্যে সমস্ত সম্পর্কই দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। ঠিক যেমনটি হওয়া উচিত। বাংলাদেশকে ভৌগোলিকভাবেই কৌশলগত দিক দিয়ে ভারত গুরুত্ব সহকারে দেখে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বাংলাদেশ কিন্তু ভুটান বা সিকিমের মতো নয়। তবে সতর্কতাসহ দেখলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি চরমে।
উনিশ শতকের ইউরোপীয় রাষ্ট্রের মডেল অনুযায়ী এ সময়ে কোনো দেশই রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন নয়, সময়ের প্রয়োজনে বিশ্বকে অর্থনৈতিকভাবে একীভূত করার ক্ষেত্রে কেউ আসলে স্বাধীন নয়। প্রকৃতপক্ষে একজন আরেকজনকে নিয়ন্ত্রণ করে তার মূলধন, পণ্য এবং মানব সম্পদ দিয়ে। নীতিনির্ধারণে কোনো দেশের স্বাধীনতা নির্ভর করে তার অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপর। ফলে স্বাধীনতা এখন এমন একটি ধারণা, যেটি দুটি দরজার মাঝখানে অবস্থিত। যেমন জাতিসংঘ অধিভুক্ত কিছু দেশের চেয়েও বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য।
সুতরাং সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়, একটি দেশ বাহ্যিকভাবে অপর দেশের ওপর ঠিক কতটা নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় উঠে আসে : প্রয়োজনের সময় বাহ্যিক মূলধনের ওপর কতটা নির্ভর করতে হয়? ধারের বিষয়টির ওপরও নির্ভর করে সার্বভৌমত্ব। এটি একটি সূক্ষ্ম খেলা। যেকোনো ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেই এটা বিবেচ্য বিষয় যে, ঋণের বেলায় গ্রহীতা ও দাতার স্বার্থ কী। এটি এক ধরনের উইন উইন লেনদেন। আরেকটু পরিষ্কারভাবে বললে- বাংলাদেশের মন যোগাতেই চীনের এ ধরনের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত ।
ভারতের পক্ষে চীনের মনোভাব অল্পতেই বোঝা সম্ভব নয়। তবে চীন বাংলাদেশকে সেই প্রয়োজনীয় জিনিসটি দিতে পারবে না, যেটা হচ্ছে তিস্তার পানি, যা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে অমীমাংসিত রয়েছে । যার জন্য দিল্লিকে কলকাতার দারস্থ হতে হয়েছে। ঢাকাকে দেওয়ার আগে কলকাতাকে দিল্লির কিছু দিতে হবে। তিস্তার ফলে কলকাতার যে ক্ষতি হবে তা পূরণেই দিল্লিকে এই বিনিময়টি দিতে হবে। এখন পর্যন্ত দিল্লি কলকাতাকে কোনো ধরনের আশ্বাসই দেয়নি। ফলে এখন পর্যন্ত চুক্তি এগোয়নি। যার দরুন দিল্লিকে সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের চুক্তিতেই তুষ্ট রাখতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য সদ্য কেনা দুটি সাবমেরিন দিল্লির চিন্তার অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে এটিই প্রথম সাবমেরিন। দিল্লির কাছে সম্প্রতি এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব নজরে এসেছে। এই চিন্তার গুরুত্বপূর্ণ কারণ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সাগরসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে দেশটি।
যদিও কোনো দেশের এ ধরনের ন্যায়সঙ্গত ভাগাভাগিতে কোনো মতবিরোধ থাকে না। ফলে ভীত হওয়া কিছু না থাকলেও ভবিষ্যৎ অনুমান করতে হয়। ঢাকা-বেজিংয়ের সম্প্রতি গভীর সম্পর্কে দিল্লি ভীত, তাই তারা এটা গড়তে দিতে চাইবে না। তাই যেভাবে এবং যতটা সম্ভব তুষ্ট রাখার চেষ্টা দিল্লি করছে যেন ঢাকা তার নতুন বন্ধু বেইজিং থেকে কিছুটা দূরে থাকে।
চীন, বাংলাদেশ এবং নেপালের যৌথ সামরিক মহড়া হলে দক্ষিণ এশিয়ার চিত্র বদলে যেতে পারে। বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা উচিত, অনুমান নির্ভর করে নয়।