রির্পোট: দিপু হাফিজুর রহমান.
সেদিন বৃষ্টি নেমেছিল দুপুর দুইটার পর-পরই। দুপুর আড়াইটায় ছিল অনুষ্ঠান। সব প্রস্তুতি শেষ করে দুইটা পঁচিশের দিকে বিডিএস-এর নীচতলার কনফারেন্স রুমের সামনে দাড়িয়ে একরাশ হতাশায় ভর করে অগনিত বৃষ্টির ফোটা দেখছিলাম। সহ-আয়োজকদের দু্ই-একজন আয়োজনের ভবিষ্যত নিয়ে গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। এই দুপুরের বৃষ্টি মাথায় করে অতিথীবৃন্দ দুরে থাক সাধারন অংশগ্রহনকারীগনও আসবেন না বলে মন্তব্য চলছিল। তখনই গাড়ীটি ঢুকলো, ড্রাইভার ও সঙ্গীদের কেউ কেউ ছাতা যোগাড়ের ভাবনা শুরু করার আগেই গাড়ি থেকে নেমে মাথাকে বৃষ্টি থেকে বাঁচানোর ভঙ্গীতে নীচু করে, দ্রুত হলে ঢুকে এলেন তৎকালীন মেয়র সদ্যপ্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ- অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথী। বিব্রত কতটা হওয়া যায়, সে মুহুর্তে অনুভব করছিলাম! মাথা থেকে বৃষ্টির পানি ঝাড়তে ঝাড়তে হাসি মুখে বললেন, “আমিই প্রথম? বৃষ্টিতো.. তাই! চলে আসবে সবাই, ফোন-টোন করেন, বলেন যে আমি আসছি।” ঘটনাটা বছর চারেক আগের।
এরকম অজস্র ঘটনার সাক্ষী বরিশালে যারাই কোন না কোন আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত তারা সবাই, যে সকল আয়োজনে তিনি এসেছিলেন। এ সব আজ, এক্ষনে ইতিহাস…. এ ইতিহাস হিরণ-ময়, হিরন্ময় ইতিহাস।
প্রতি বছর ঈদ আসে, ঈদ আসবে। বরিশালের হাজার হাজার ঘড়মুখো মানুষের ভীড় লঞ্চঘাটে নেমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আর অভিনন্দন জানাতে আসা হিরন্ময় ইতিহাস খুজে ফিরবে স্মৃতিতে। যদি খুজে পায় তেমন কোন কাউকে কোনদিন, নিশ্চিত বলবে “আরে, এতো হিরণ ভাই-র মতো।” তার ছায়া আড়াল করে মানুষের কাছে যাওয়ার আর কোন পথ অবশিষ্ট নেই কারো হয়তো, এই বরিশালে। যদি জনপ্রিয় হতে হয় কোন নেতাকে, তা আর সম্ভব নয় শওকত হোসেন হিরনকে ছাপিয়ে। মানুষের হৃদয়ে ঢুকতে হলে, হিরণ হতে হবে। অনুসরন করতে হবে হিরন্ময় ইতিহাস।
আজ রোদ ছিল, দুপুর দুইটার পর-পরই যেমন রোদ থাকার কথা। দুপুর আড়াইটায় ছিল অনুষ্ঠান। সব প্রস্তুতি শেষ করে দুইটা পঁচিশের দিকে বঙ্গবন্ধু উদ্যান-এ দাড়িয়ে একরাশ হতাশায় ভর করে অগনিত শোকাহত মানুষ দেখছিলাম।তারা সবাই বরিশালের ভবিষ্যত নিয়ে গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। এরকম দুপুরে ঘোর ঘর-পালানো ছেলেটিও রোদ মাথায় দুরে থাক খোলা মাঠে দাড়িয়ে থাকার কথা না। তখনই লাশবাহী এম্বুলেন্সটি মঞ্চের দিকে এগোতে শুরু করলো। মাঠে লক্ষাধিক শোকাহত মানুষের চোখ-বিদ্ধ এম্বুলেন্সে শুয়ে আছে সাবেক মেয়র সদ্যপ্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ। ড্রাইভার ও গাড়ীর সঙ্গী ছাড়া কেউ নড়ছিল না। যদি এম্বুলেন্স থেকে বের হয়ে আসতেন, হয়তো হাত দিয়ে রোদ আড়াল করে সেভাবে হেসে দিয়ে বলতেন, “আমি সবার শেষে এলাম!” বের হলেন না আর, তবে শেষ বিদায়ে শোকাহত মানুষের এই বিশাল উপস্থিতীতে প্রমান করিয়ে নিলেন তার জনপ্রিয়তার পরিমান, যা সৃষ্টি করলো আর একটি ইতিহাস। হিরন্ময় ইতিহাস।
১১ এপ্রিল ২০১৪
ফটোগ্যালারী: